ভুল চিকিৎসায় মা ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে- এমন অভিযোগে মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পাঁচ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মুগদা থানায় মামলা করা হয়েছে। ৩০৪-ক/০৪ দণ্ডবিধি উল্লেখ করে সোমবার বেলা ১১টার দিকে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন মৃত ফাতেমার স্বামী তারেকুল হাসান তারেক। মামলা নম্বর-১৮।
অভিযুক্তদের চারজন হলেন- ডা. তানজিনা, ডা. সুমী, ডা. আনিস ও ডা. মৌসুমী।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ফাতেমা আক্তার কণা (২৪) গর্ভবতী থাকা অবস্থায় তারেক নিয়মিত মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চেক-আপ করাতেন। গত সপ্তাহে ফাতেমাকে ওই হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসককে দেখালে তিনি জানান, আগামী ১৯ এপ্রিল সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য দিন। রবিবার বিকেলে ফাতেমা পেটে ব্যথা অনুভব করেন। তার স্বজনেরা তাকে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শে গাইনি বিভাগে ভর্তি করান। সেখানে ডা. তানজিনা পরীক্ষার-নিরীক্ষার পর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জানান, সন্তান ভূমিষ্ঠ করাতে সিজার করতে হবে। আগের গাইনি চিকিৎসকের দেওয়া ১৯ এপ্রিলের সম্ভাব্য দিনের কথা জানালে তানজিনা বলেন, সন্তান ডেলিভারি করতে হলে এখনই সিজার করাতে হবে।
ডাক্তারের পরামর্শে স্ত্রীর সিজার করাতে রাজি হন তারেক। তানজিনার পরামর্শ মতো, ৫০০০ টাকার ওষুধ, পাঁচ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে সন্ধ্যা ৭টার দিকে হাসপাতালে যান। রাত ৯টার দিকে ডা. তানজিনা, ডা. সুমী, ডা. আনিস ও ডা. মৌসুমী রোগী কণাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। রাত সাড়ে ১১টার দিকে একে একে সকল চিকিৎসক বের হয়ে যান। এ সময় ডা. মৌসুমীকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ''বাবা, তোমার স্ত্রীর অপারেশন চলছে কোনো চিন্তা কর না।'' অনেক বেশি সময় লাগায় তারেক অপারেশন থিয়েটারের দরজা খুলে দেখেন- সেখানে কেউ নেই। দুইজন ওয়ার্ড বয় এটা-ওটা করছেন।
এর কিছুক্ষণ পর রাত ১২টার দিকে মুগদা জেনারেল হাসপাতালের আরেক চিকিৎসক সুমন মোবাইল ফোনে তারেকের প্রতিবেশী চঞ্চলকে বলেন, ''উনাকে (তারেককে) সান্ত্বনা দিন, উনার স্ত্রী মারা গেছেন।''
স্ত্রীর মৃত্যুর খবর শুনে তারেক থানায় খবর দেন। পুলিশ রাতে মা ও নবজাতকের লাশ উদ্ধার করে সোমবার দুপুরে ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে নিয়ে যায়।
এজাহারে মায়ের মৃত্যুর কথা উল্লেখ থাকলেও নবজাতক কন্যা শিশুটির মৃত্যু কখন হয়েছে, তা উল্লেখ নেই। নিহত কণার মামা শাহজাহান অভিযোগ করেন, এটি একটি মার্ডার। অপারেশনের সময় চিকিৎসকরা তথ্য গোপন করেছেন। বার বার জিজ্ঞাসা করার পরও তারা মিথ্যা বলেছেন, শেষ পর্যন্ত রোগীর মৃত্যুর পর পালিয়ে গেছেন। অন্য চিকিৎসক ফোন করে বলেছেন, মা ও নবজাতক দুইজন একইসঙ্গে মারা গেছে।
এ ব্যাপারে মুগদা থানার পুলিশ পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, গভীর রাতে মা ও নবজাতকের লাশ উদ্ধার করে থানায় আনার পর সোমবার বেলা ১১টার দিকে মামলা করা হয়। ময়না তদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। অভিযুক্ত চিকিৎসকরা সবাই পলাতক রয়েছেন। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
রোগীর স্বজনরা বলেন, যেখানে এক ডাক্তার সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার তারিখ দিয়েছেন ১৯ এপ্রিল, সেখানে একমাস আগেই অন্য ডাক্তার সিজার করার কথা বললেন। শেষ পর্যন্ত দু'টি জীবন ঝরে গেল। কোন প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশুনা করে এরা ডাক্তার হয়?
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে গত ১০ বছরে সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের হার বেড়েছে প্রায় ৬ গুণ। বর্তমানে বাংলাদেশে শতকরা ৩৮ ভাগ শিশুর জন্ম হয় সিজারে। অথচ, যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশেও মাত্র ৮ ভাগ শিশুর জন্ম সিজারের মাধ্যমে হয়।
বিডি-প্রতিদিন/২১ মার্চ ২০১৬/ এস আহমেদ