চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন ছাড়লো বিকাল ৫টায়। নাস্তা আসলো রাত পৌনে ৮টায়। এতে দেয়া হলো কাটলেট, দুই পিস ছোট চিকেন ফ্রাই, ২৫০ এমএল পানি, ২৫০ এমএল কোকসহ ২০০ টাকার নাস্তা। চিকেনটা ছিল একদিন আগের। এ নাস্তার প্যাকেটে সবমিলেই ৭০ টাকার উপরে হবে না। এসব কথা বললেন ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বিরতিহীন সার্ভিস সোনার বাংলা ট্রেনের যাত্রী বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুসা খান। খাবারের দাম বেশি এবং একদিন আগের খাবারসহ নানাবিধ অভিযোগ তুলে ধরেন ‘সোনার বাংলা’ ট্রেনের একাধিক যাত্রী।
সোমবার সকাল ৭টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সোনার বাংলা ট্রেনে ট কোচের ২২-৫৪ নং সিটের ৩২ জন যাত্রী খাবার পাননি। একই সাথে আগের দিন বিকাল ৫টায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনের ‘ঝ’ কেবিনের ১৩ জন যাত্রীসহ মোট ৪৫ জন যাত্রী খাবার পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। একই সাথে সরবরাহকৃত খাবারগুলো কম দামী এবং নিম্নমানের বলেও প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রীরা। এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম আবদুল হাইকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে খাবার না পাওয়া যাত্রীদেরকে খাবারের টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে বলে জানান পর্যটন করপোরেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।
সকাল ৭টায় ঢাকা থেকে আসা শফিউল আজম নামের এক যাত্রী বলেন, ট্রেনের টিকেটের সাথে খাবারের টাকা নিলেও খাবার দেননি। পরে টাকা ফেরত দেয়ার কথা বললেও সেই যে গেলো, আর কারো কোন দেখা নেই। এভাবেই অনেক যাত্রী খাবার পাননি বলে জানান তিনি। শহীদ নামের অপর যাত্রী বলেন, খাবার দেয়া হলেও একদিন আগের খাবারও রয়েছে। এতে খাবারের দাম বেশি রাখার পাশাপাশি উপযোগীও নেই খাবারগুলো। যা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না।
রেলওয়ে সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, মন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা থাকলেও সুষ্ঠুভাবে ট্রেন পরিচালনায় কারো কোন দায়িত্ব নেই। বর্তমান জিএমসহ সবাই নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। বেশির ভাগ সময়ই তিনি ঢাকায় বসে থাকেন। মন্ত্রীকে বিপদে ফেলতে জিএম কৌশলে এসব তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে আগামীতেও নিয়োগ বাণিজ্য করতে জিএম সকল প্রকার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে রেল প্রশাসনে জিএম’র ভূমিকা নিয়ে জনমনে অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বলে জানান তিনি। একই কথা বললেন রেল শ্রমিকলীগ নেতা কামাল পারভেজ বাদল।
অভিযোগ অস্বীকার করে পর্যটন করপোরেশনের আবাসিক ম্যানেজার আনম জিয়াউল করিম বলেন, ট্রেনে মোট কতজন যাত্রী আছেন, এ তথ্য সংগ্রহ করেই খাবার সরবরাহ করা হয়। এতে সঠিক তথ্য না পাওয়ায় দুই দিনে প্রায় ৬৩ জন যাত্রীকে খাবার দিতে অসুবিধার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু খাবার দিতে না পারলেও সঙ্গে সঙ্গে খাবারের টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, খাবার সরবরাহের সাথে সাথে ট্রেনের স্টাফরা নিজেদের খাবার আগেই নিয়ে ফেলায় যাত্রীরা খাবার পেতে একটু দেরি হয়। একই সাথে খাবার সরবরাহের জন্য কোন ট্রলি না থাকায় স্টাফরা হাতে হাতেই সরবরাহ করে থাকেন। এতে করে প্রায় ৭শ' যাত্রীদের খাবার দিতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হয়। তবে ফোর স্টার হোটেলের মানেই খাবার দেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, লাল-সবুজের ‘সোনার বাংলা’ ট্রেনটি ৭শ' ৪৬ সিট নিয়ে শনিবার ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৫টায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এবং সকাল ৭টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। প্রতি টিকেটের সাথে নির্ধারিত ১৯৫ টাকায় খাবারের মেন্যু হিসেবে ৫টি সেট রয়েছে। একটি মেন্যুতে রয়েছে ভেজিটেবল স্যান্ডউইচ-১টি, মিনি চিকেন কাটলেট-১টি, মিনারেল ওয়াটার ১টি। একইভাবে অন্য চারটি মেন্যু রয়েছে। ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে খাবারসহ এসি চেয়ারের ভাড়া ১১০০ টাকা, এসি সিটের ভাড়া ১০০০ টাকা ও শোভন চেয়ারের ভাড়া ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ট্রেনে যাত্রীদের খাবার সরবরাহ করছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। ক্যাটারিং এর দায়িত্ব পালন করছে এসএ করপোরেশন নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
এর আগে বাংলাদেশের প্রথম বিরতিহীন আন্তনগর ট্রেন সুবর্ণ এক্সপ্রেস ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচল শুরু করে ১৯৯৮ সালে। লাল-সবুজের এ ‘সোনার বাংলা’ ট্রেনটি গত ২৫ জুন শনিবার কমলাপুর ষ্টেশন থেকে সকাল সাড়ে ১১টায় উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক এমপি, সংসদীয় কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ও রেলওয়ে কর্মকর্তারাসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
বিডি-প্রতিদিন/ ১১ জুলাই, ২০১৬/ আফরোজ