আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অন্যতম প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম বলেছেন, রাজনীতিতে যাই হোক, ১৩ নভেম্বর শেখ হাসিনার মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই। তিনি বলেন, ওইদিন রায় নয়, রায় কবে ঘোষণা করা হবে, সেই দিন ধার্য হবে।
গতকাল ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুলে পুলিশের গুলিতে ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তাসহ দুজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। ফলে এই মামলার বস্তুগত সাক্ষী উপস্থাপন সমাপ্ত হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ১২ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক তিনটি মামলায় সাবজেলে থাকা ১৫ জন বর্তমান ও সাবেক সেনা কর্মকর্তার পক্ষে আইনজীবীর তালিকা থেকে নাম প্রত্যাহার করেছেন ব্যারিস্টার এম সরোয়ার হোসেন। গতকাল তাঁর নাম প্রত্যাহারের আবেদন মঞ্জুর করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এর আগে তিনিসহ পাঁচজন আইনজীবী গত ২২ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালের কাছে তিনটি মামলার জন্য ওকালতনামা জমা দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনার মামলার বিষয়ে প্রসিকিউটর তামীম বলেন, বিচারক আদালতে রায় ঘোষণার দিন ঠিক করেন। এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কোনো মামলার কার্যক্রম শেষ হলে সেখানে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএবি) রাখা হতো। এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মামলায় রায় ঘোষণার দিন ঠিক করার জন্য একটি তারিখ ঘোষণা করেছেন। ওইদিন ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার তারিখ ঠিক করে দেবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো কর্মসূচি গ্রহণ করবে। এর জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেবে রাষ্ট্র বা সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রসিকিউশনের সঙ্গে এই রাজনৈতিক কর্মসূচি বা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের কোনো সম্পর্ক নেই। এই পরিস্থিতিতে কোনো বাড়তি চাপ অনুভব করছে না প্রসিকিউশন।
এর আগে গত ২৩ অক্টোবর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণের জন্য ১৩ নভেম্বর দিন ঠিক করে দেন ট্রাইব্যুনাল।
চানখাঁরপুল মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্য ১২ নভেম্বর : এদিন প্রসিকিউশনের ২৩ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন পুলিশের কনস্টেবল মাসুদ রানা ও ২৪ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন মামলার বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা প্রসিকিউটর তানভীর জোহা। তানভীর জোহা জবানবন্দির সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফজলে নূর তাপসের দুটি ফোনালাপ বাজিয়ে শোনান। এদিন সিআইডির ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ রোকনুজ্জামান পুনরায় জবানবন্দি দেন। পরে তাদের জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
পরে ব্রিফিংয়ে প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম সাংবাদিকদের বলেন, চানখাঁরপুলের মামলায় এখন পর্যন্ত ২৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। ১২ নভেম্বর তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দির জন্য দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। ওই দিন আমরা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপনের মাধ্যমে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত করতে পারব। এরপর যুক্তিতর্কের ধাপ বাকি থাকবে। পরে রায়ের তারিখ নির্ধারণ।
তিনি বলেন, জুলাই গণ অভ্যুত্থান চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ছাত্র-জনতার ওপর যে মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, এর ফলে ৫ আগস্ট চানখাঁরপুল এলাকায় ছয়জন নিহত হন। এ ছাড়া তদন্তকালে তদন্ত সংস্থা যে প্রতিবেদন দিয়েছিল, এতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৫০-এর বেশি সদস্য নিয়োজিত ছিলেন। তাদের বেশির ভাগই গুলিবর্ষণ করেছিলেন। এর মধ্যে এ মামলায় মাত্র তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। কারণ তারা মারণাস্ত্র ব্যবহার করেছেন। এ মামলায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ মোট আসামি ৮ জন। এর মধ্যে চারজন পলাতক। হাবিব ছাড়া পলাতক অন্য আসামিরা হলেন- ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল। এ মামলার গ্রেপ্তার চার আসামি হলেন- শাহবাগ থানার সাবেক ওসি (অপারেশন) মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন ও মো. নাসিরুল ইসলাম।
গতকাল সাক্ষ্য গ্রহণের সময় তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এর আগে গত ১৪ জুলাই সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট আসামির বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।