ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে সারা দেশে আরও সক্রিয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতা-কর্মীরা। সমর্থকদের মাঝে উৎসবের আমেজ। প্রার্থীরা রাজধানী ছেড়ে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যেতে শুরু করায় চাঙা তৃণমূল। নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় ব্যাপক তৎপর নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। দেশজুড়েই বইছে নির্বাচনি হাওয়া। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শক্ত নেতৃত্বের কারণে এবার দলের অভ্যন্তরে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে অন্যবারের মতো বিদ্রোহী প্রার্থী, কোন্দল কিংবা বিরোধের মতো বিষয়গুলো মাথা চাড়া দিতে দেখা যাচ্ছে না বলে জানান নেতা-কর্মীরা।
বিএনপিতে এবার অন্যরকম চিত্র। যারা মনোনয়ন পাননি তারাও বিভেদ ভুলে বৃহত্তর স্বার্থে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন। সমর্থন দিচ্ছেন অকুণ্ঠভাবে। সব মিলে দলের ভিতর যেন গড়ে উঠেছে ‘সিমেন্টেড’ ঐক্য। নির্বাচনি প্রতিপক্ষকে মোকাবিলায় তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন। বিএনপির ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তারা যাচ্ছেন সাধারণ মানুষের কাছে।
গত ১৩ জুন লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সফল বৈঠকের পরই মূলত সারা দেশে নির্বাচনি ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে বলে জানান দলটির একাধিক সিনিয়র নেতা। দলটির নেতা-কর্মীরা তখন থেকেই চাঙা হতে শুরু করেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তৃণমূলসহ সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যারা এবার মনোনয়ন পাননি তাদের যথাযথ সম্মান ও দায়িত্ব দেবে দল। ‘নির্বাচনি মাঠে বিএনপির তৃণমূল চাঙা হওয়া’ প্রসঙ্গে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই সরকার পরিবর্তন তথা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী। ফলে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সর্বস্তরের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের চাঙা হয়ে ওঠাই স্বাভাবিক।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মুক্তিলাভের পর থেকেই বিএনপি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানেরও দেশে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় নেতা-কর্মীদের মাঝে যেন প্রাণ ফিরে এসেছে। চলতি নভেম্বর মাসের শেষ কিংবা আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দেশে ফিরছেন তিনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তারেক রহমানের দেশে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে দলের দৃশ্যপটই পাল্টে যাবে। দেশের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এখনই উদ্দীপনা বিরাজ করছে। জানা গেছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএনপির এখন মূল লক্ষ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের রায় নিয়ে সরকার গঠন করা। জনগণের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের মাধ্যমে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলের তৃণমূল নেতাদের আগেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলটি মনে করছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে ইতিহাসের অন্যতম কঠিন পরীক্ষা। তাই শীর্ষনেতা তারেক রহমান নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন, জনগণের আস্থা নষ্ট করে এমন কাজ পরিহার করতে।
নেতারা জানিয়েছেন, বিএনপি জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করলে জনগণের মধ্যে পরিবর্তনের যে আকাঙ্খা সেটি তারা ধরে রাখবেন এবং ৩১ দফার ভিত্তিতে রাষ্ট্র কাঠামোয় গুণগত পরিবর্তন আনবেন। সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে গত বছরের জুলাইয়ে ওই রূপরেখা ঘোষণা করে বিএনপি। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের বিএনপি নেতারা জানান, লন্ডনে ড. ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক সফল হওয়ার পর থেকেই মূলত সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা শুরু হয়। কেন্দ্র থেকে নির্দেশ আসে নির্বাচনি প্রস্তুতি এগিয়ে নেওয়ার।
এই নির্দেশনা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় নির্বাচনি প্রস্তুতি এগিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়ে যায়। নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসবে প্রস্তুতি তত জোরদার করা হবে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, কেন্দ্র থেকে দলের যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে তা দলীয় নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে সফল করতে হবে। এরপর থেকে কেন্দ্রের নির্দেশে কাজ করে যাচ্ছেন নেতা-কর্মীরা।
জানা যায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে শিগগিরই বিএনপি সারা দেশে সভা-সমাবেশসহ নির্বাচনকেন্দ্রিক বিভিন্ন কর্মসূচি পালন জোরদার করবে। আর এসব কর্মসূচি সফল করতে কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতারাও জেলা-উপজেলা সফর করবেন। এ ছাড়া সংসদীয় আসনের মনোনীত প্রার্থীরাও মাঠে সক্রিয় থাকবেন। পর্যবেক্ষণ করবেন খোদ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।