মেহরাব হোসেন সামিন। তারুণ্যের শক্তিতে দীপ্তিমান এক হকি তারকা। তার আশপাশে আছে আরও অনেক তরুণ। মাহমুদ, আশরাফুল, রামিন, এনাম, আমিরুল, আবদুল্লাহসহ ২০ জন। প্রত্যেকেরই বয়স ২১ বছরের কম। টসবগে তরুণ। যুব হকি বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি সেরে নিয়েছেন। প্রথমবারের মতো এ বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখানোর তাড়না সবার মধ্যেই। তার চেয়েও বড় দিক হলো, আত্মবিশ্বাসের স্ফূরণ। দীর্ঘ চার মাসের অনুশীলন এবং নানা স্থানে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে নিজেদের পরিপক্ব করে নিয়েছে দলটি। অতীতের দুর্বলতা ঝেরে ফেলে বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের মেলে ধরার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। গতকাল বিমানবাহিনীর ফ্যালকন হলে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে ছোট্ট এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন হকি খেলোয়াড়রা। সেখানে বিশ্বকাপের জার্সি উন্মোচন করেছেন হকি ফেডারেশনের সভাপতি এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান।
২৮ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর ভারতের চেন্নাই ও মাদুরাইয়ে অনুষ্ঠিত হবে যুব হকি বিশ্বকাপের আসর। অনূর্ধ্ব-২১ বয়সি হকি খেলোয়াড়দের নিয়ে ২৪ দলের বৈশ্বিক এ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ খেলবে ‘এফ’ গ্রুপে। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও ফ্রান্সের মতো বিশ্বসেরা দল। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো এ টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে। ক্রিকেটের পর দলগত কোনো টুর্নামেন্টে এটাই সর্বোচ্চ পর্যায়ের অংশগ্রহণ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের। ১৮ নভেম্বর ভারতের উদ্দেশে দেশ ছাড়বে হকির এ যুব দল।
হকিতে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ যাত্রা নিয়ে ফেডারেশনের সভাপতি হাসান মাহমুদ খান বলেন, ‘এটি একটি অনন্য ক্ষণ এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, আমাদের দল ভালো পারফরম্যান্সের মাধ্যমে দেশের পতাকা আরও উঁচুতে তুলে ধরবে। শৃঙ্খলা সাফল্যের চাবিকাঠি এবং একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ দল সর্বদা জয়লাভ করে। মাঠের খেলায় ১১ বনাম ১১ লড়াই হয়, প্রতিপক্ষ কোন দেশ বা দল বড় নয়, বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে এবং ভালো নৈপুণ্য প্রদর্শন করবে এটিই আমার প্রত্যাশা।’ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক লে. ক. (অব) রিয়াজুল হাসান জানান, বাংলাদেশের তরুণ হকি দলটি ১৯-২৬ নভেম্বর টানা আট দিন ভারতে এক ঘণ্টা করে অনুশীলনের সুযোগ পাচ্ছে। সেখানে বিশ্বকাপ শুরুর আগে চিলি ও সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে। এর মাধ্যমে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি নিজেদের শক্তিমত্তাও শেষবারের মতো ঝালিয়ে নিতে পারবেন মেহরাব হাসানরা।
বাংলাদেশ দলের হেড কোচ সিগফ্রিড আইকম্যান তিন মাস ধরে কাজ করছেন। এ তিন মাসে উন্নতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘খেলোয়াড়দের গতি ও বল নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাজ করেছি। আধুনিক হকিতে গতি ও দলগত সমন্বয়ের ওপরই সাফল্য নির্ভর করে। আমরা সেটিরই প্রতিফলন রাখতে চাই।’ দলের বর্তমান পারফরম্যান্স নিয়ে আইকম্যান বেশ সন্তুষ্ট। তিনি এমন এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমরা ডিফেন্সটা গুছিয়েছি। আক্রমণভাগ নিয়েও কাজ করেছি। তা ছাড়া প্রতিপক্ষের কাউন্টার আক্রমণ কীভাবে প্রতিহত করতে হবে তা নিয়েও অনেক অনুশীলন করেছি। আমরা মূলত বল নিজেদের কাছেই রাখতে চাই। বল পজিশনে এগিয়ে থাকলে ম্যাচে ভালো করার সুযোগ থাকবে।’
অধিনায়ক মেহরাব হাসান সামিন বলেন, ‘আমরা এখন ইউরোপীয় ধারাটা বুঝতে পেরেছি। আইকম্যানের মতো বড় কোচের অধীনে দলের খেলার ধারায়ও পরিবর্তন হয়েছে। আমরা গ্রুপের সব দলকেই সম্মান করি। তবে কোনো দলকেই ভয় করি না।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের খেলাও এখন ইউরোপীয় মানের কাছাকাছি পৌঁছেছে বলে আমি মনে করি।’ ‘এফ’ গ্রুপে অস্ট্রেলিয়া অনেক শক্তিশালী এক দল। ফ্রান্স এবং দক্ষিণ কোরিয়াও বেশ শক্তিশালী। তবে দক্ষিণ কোরিয়া এবং ফ্রান্সকেই চমকে দিয়ে জয় ছিনিয়ে আনতে চায় বাংলাদেশ। সরাসরি এটা না বলেননি কেউ। তবে অন্তত একটা জয় চান সবাই। জাতীয় হকি দলের সাতজন নিয়ে আইকম্যান বিশ্বকাপের জন্য দল সাজিয়েছেন। জাতীয় দলের সাতজন পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের হকি সিরিজে অংশ নেবেন। এটাও বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
যুব হকি বিশ্বকাপের স্কোয়াড : মেহরাব হোসেন সামিন (অধিনায়ক), মাহমুদ হাসান, আশরাফুল হক, রামিন হোসেন, এনাম শরীফ, মুন্না ইসলাম, রাহিদ হাসান, আজিজার রহমান, সাব্বির হোসেন কনক, দ্বীন ইসলাম, আশরাফুল ইসলাম, মেহেদী হাসান, ইসমাইল হোসেন, আমিরুল ইসলাম, হোজিফা হোসেন, ওবায়দুল হোসেন জয়, তানভীর রহমান, রাকিবুল ইসলাম, আবদুল্লাহ ও শহীদুর রহমান সাজু।