ঢাকাই চলচ্চিত্রের নায়ক শাকিব খান। সম্প্রতি তার আসন্ন সিনেমা ‘সোলজার’-এর লুক প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই চলচ্চিত্রপাড়ায় চলছে ব্যাপক আলোচনা। রুক্ষ গোঁফ, কালো পোশাক আর তীক্ষ্ণ অভিব্যক্তিতে বাংলার খান যেন হাজির এক সম্পূর্ণ নতুন রূপে। কিন্তু এই নতুনত্বের উল্টো পিঠেই এখন জন্ম নিয়েছে এক বিতর্ক-এই লুক কি সত্যিই মৌলিক, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে অনুকরণের ছাপ?
দুই নায়কের ‘একই’ পোশাক ও অভিব্যক্তি
সিনেমা ভক্তরা বলছেন, শাকিব খানের ‘সোলজার’ লুকের সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে ভারতের দক্ষিণের মালায়ালাম ইন্ডাস্ট্রির খ্যাতিমান অভিনেতা পৃথ্বীরাজ সুকুমারনের একটি পরিচিত লুকের। চলতি বছরের মার্চ মাসে মালায়ালাম ব্লকবাস্টার ‘এল টু এমপুরান’-এর প্রচারণায় পৃথ্বীরাজ সুকুমারন প্রায় একই রকম লুকে ধরা দিয়েছিলেন। দুই তারকার দুটি লুক পাশাপাশি রাখলে সাদৃশ্যগুলো এতটাই জোরালো যে, কেউ প্রথম দেখায় চমকে উঠতে বাধ্য। যেন একই ডিজাইনারের হাতে তৈরি হয়েছে দুই অভিনেতার স্টাইল!
পোশাকের হুবহু মিল
শাকিব খান এবং পৃথ্বীরাজ দুজনই কালো রঙের ডেনিম জ্যাকেট বা শার্ট-জ্যাকেটে, যার ওপর সাদা সুতোয় কন্ট্রাস্ট স্টিচিং করা। এই হাই-ভিজিবিলিটি স্টিচিং পুরো পোশাকটিকে দিয়েছে এক অসাধারণ ডিজাইন এলিমেন্ট, যা লুকে এনেছে এক অত্যাধুনিক বৈপ্লবিক ছোঁয়া। উভয়ের পোশাকের ডিজাইন এবং কাট প্রায় হুবহু এক।
গোঁফ ও অভিব্যক্তি
দুজনের মুখেই রয়েছে তীক্ষ্ণ ও ঘন গোঁফ, যা তাদের চেহারায় যোগ করেছে দৃঢ়তা ও রহস্যময়তা। সেই সঙ্গে পরিপাটি করে আঁচড়ানো এবং খানিকটা ওয়েভি হেয়ারস্টাইল-যা দুজনের সঙ্গেই মানিয়ে গেছে দারুণভাবে।
সানগ্লাসের সাদৃশ্য
চোখে সানগ্লাস, যা লুককে করেছে আরও ড্যাশিং। শাকিব খান ব্যবহার করেছেন এভিয়েটর স্টাইলের সানগ্লাস, যা তার চেহারায় যোগ করেছে ক্ল্যাসিক নায়কোচিত ভাব। অন্যদিকে পৃথ্বীরাজ সুকুমারন প্রথম লুকে টর্টসেল ফ্রেমের কালো লেন্সের সানগ্লাস পরলেও, পরে তিনিও এভিয়েটর স্টাইলের চশমাও ব্যবহার করেন, যা সাদৃশ্যকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।
গল্পের প্রেক্ষাপটেও কি মিল?
লুকের সাদৃশ্য ছাপিয়ে আরও বড় প্রশ্ন উঠছে গল্পের প্রেক্ষাপট নিয়ে। জানা যায়, শাকিব খানের ‘সোলজার’ সিনেমায় তাকে একজন দেশপ্রেমিক সৈনিক বা সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তার ভূমিকায় দেখা যাবে, যিনি দেশের দুর্নীতি ও অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে লড়েন। অন্যদিকে পৃথ্বীরাজ অভিনীত ‘এল টু এমপুরান’ ছবিতে তার চরিত্র ‘জায়েদ মাসুদ’ একজন সিন্ডিকেট কমান্ডার এবং জটিল রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। ভিন্ন চরিত্র হলেও উভয়ের চরিত্রেই সামরিক বা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং অন্ধকার জগতের সঙ্গে লড়াইয়ের ইঙ্গিত রয়েছে। এ মিলগুলোই নকলের প্রশ্নকে আরও জোরদার করছে।
অতীতেও উঠেছে নকলের অভিযোগ
শাকিব খানের বিরুদ্ধে এমন নকলের অভিযোগ নতুন নয়। এর আগেও তার একাধিক চলচ্চিত্র ঘিরে এই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। শাকিব অভিনীত ‘পাসওয়ার্ড’ ছবিটি কোরিয়ান চলচ্চিত্র ‘টার্গেট’-এর নকল বলে অভিযোগ উঠেছিল, যা মুক্তির পর দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। অন্যদিকে ‘দরদ’ সিনেমার ‘ওরে পাগল মন’ গানটির বেজ লাইন অন্য একটি গানের নকল বলে অভিযোগ করা হয়েছিল। এ ছাড়াও অ্যানিমেল ছবিতে রণবীর কাপুরে লুকেও তুফান ছবিতে শাকিব খানের নকলের অভিযোগ উঠেছিল জোরালোভাবে। তবে পরিচালক সাকিব ফাহাদ মনে করেন, নকলের এই বিতর্ক সিনেমার মুক্তির পরই দর্শকদের ভালোবাসায় ভেঙে যাবে।
নতুনত্বের খোঁজে অনুকরণের আশ্রয়?
বিশ্বায়নের যুগে আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ট্রেন্ড অনুসরণ করা দোষের কিছু নয়, কিন্তু হুবহু অনুকরণের অভিযোগ উঠলে তা তারকার মৌলিকতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। ‘সোলজার’ লুক নকল হোক বা না হোক, এটি এরই মধ্যে শাকিব খানের সিনেমাকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এনে দিয়েছে। শুধু লুক নয়, গল্পের মৌলিকতা দিয়ে শাকিব খান শেষ পর্যন্ত এই বিতর্কের জবাব দিতে পারেন কি না। ভক্তরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন, পর্দায় এই ‘সোলজার’ কি সত্যিই দেশীয় চলচ্চিত্রের জন্য এক নতুন অধ্যায় সূচনা করবে?