অর্থাভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের নিয়মিত বেতন দিতে পারছেনা বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি)। আয় বৃদ্ধির জন্য সম্প্রতি বকেয়া হোল্ডিং ট্যাক্স ও পানির বিল আদায়সহ নতুন কর আরোপের প্রক্রিয়া চলছে। বকেয়া হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় কমিটির সভাপতি করা হয়েছে নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর গাজী আক্তারুজ্জামান হিরুকে। যিনি হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় কমিটির সভাপতি, তার কাছেই হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ সিটি করপোরেশনের বকেয়া ২৩ হাজার ১০২ টাকা। শুধু তিনি একা নন, বিসিসি’র ২২জন কাউন্সিলের কাছে হোল্ডিং টাক্স বাবদ সিটি করপোরেশনের মোট পাওনা আড়াই লাখ। প্রত্যেক কাউন্সিলরের একাধিক হোল্ডিং নম্বরের বিপরীতে বকেয়া পড়েছে এই টাকা।
নগরবাসীর অভিযোগ, সাধারন বাসিন্দাদের কর গত কয়েক বছরে শতভাগ বাড়ানো হলেও কাউন্সিলররা এখনও বিলুপ্ত পৌরসভার আমলে নির্ধারিত হারে হোল্ডিং ট্যাক্স দিচ্ছেন। বিসিসি’র কর শাখার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে তারা নিজেদের ট্যাক্স বাড়াতে দিচ্ছেন না।
বিসিসি সূত্র জানায়, ২ নম্বর প্যানেল মেয়র ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোশারেফ আলী খান বাদশার তিনটি হোল্ডিং নম্বরে বকেয়া রয়েছে ১১ হাজার ৫৩ টাকা। একইভাবে ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ সাইদুল হাসান মামুনের ২ হাজার ৭৬৩ টাকা, ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইউনুস মিয়ার ৪ হাজার ৪২১ টাকা, ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাইনুল হকের নামে ৪টি হোল্ডিং নম্বরের বিপরীতে ৬৭ হাজার ৯২৮ টাকা, ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ আকবর হোসেনের নামে দুটি হোল্ডিং নম্বরে ১৩ হাজার ২৬৪ টাকা, ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সেলিম হাওলাদারের নামে তিনটি হোল্ডিং নম্বরে ৫০ হাজার ৮৪৫ টাকা, ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন মাসুমের ১৫ হাজার ৮৫ টাকা, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ জাকির হোসেন জেলালের ৪ হাজার ৪৮২ টাকা, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট মীর জাহিদুল কবিরের ২টি হোল্ডিং নম্বরে ৯ হাজার ৪০৯ টাকা, ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর গাজী নঈমুল হোসেন লিটুর নামে তিনটি হোল্ডিং নম্বরে ৪০ হাজার ৮৪৬ টাকা, ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম তালুকদারের ২ হাজার ৭৬৩ টাকা, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফিরোজ আহম্মেদের ৩৮২ টাকা, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিনের ১ হাজার ৯৮৫ টাকা, ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী মনিরুল ইসলামের ১ হাজার ৮২৬ টাকা, ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর খায়রুল মামুন শাহিনের ৮১৯ টাকা এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর জাহানারা বেগমের ৩ হাজার ৫৬৪ টাকা ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর কামরুন্নাহার রোজীর নামে দুটি হোল্ডিং নম্বরে ৬ হাজার ৬৪৬ টাকা বকেয়া রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, কাউন্সিলরদের হোল্ডিং ট্যাক্স সাধারণ নগরবাসীর হোল্ডিং ট্যাক্সের চেয়ে ৩-৪ গুন কম। কর নির্ধারন শাখার কর্মকর্তাদের চাপ প্রয়োগ করে তারা তাদের কর বাড়াতে দিচ্ছেন না।
কর নির্ধারন শাখার এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, কাউন্সিলরদের চাপের মুখে তাদের হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি করা যাচ্ছে না। তাদের কর নির্ধারণ করা হয়েছে বরিশাল পৌরসভা আমলে। এরপর থেকে কাউন্সিলরদের ট্যাক্স বৃদ্ধি করা যায়নি।
কাউন্সিলরদের হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া থাকা লজ্জাজনক অভিহিত নগরীর ২০নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসএম জাকির হোসেন জানান, নিজ নিজ দায়িত্বে বকেয়া হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করা উচিত। তারা ট্যাক্স না দিলে নগরবাসীও কর পরিশোধে নিরুৎসাহিত হবেন। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে সকল কাউন্সিলরকে বকেয়া হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের তাগিদ দেন তিনি।
বিসিসির প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুজ্জামান জানান, অধিকাংশ কাউন্সিলরের কাছেই হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া রয়েছে। বকেয়া ট্যাক্স পরিশোধের জন্য তাদের কাছে চিঠি পাঠানো হচ্ছে।
সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামাল জানান, বকেয়া কর আদায়ে প্রথমে চিঠি এবং পরে আইন অনুযায়ী মালক্রোকের নোটিশ দেয়া হবে। কাউন্সিলর কিংবা সাধারণ বাসিন্দা যেই হোক না কেন বকেয়া কর পরিশোধের প্রশ্নে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার