চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ দিবসের ৮৭ তম বার্ষিকী উপলক্ষে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মহান বিপ্লবীদের স্মৃতি সংরক্ষণে পাহাড়তলির ঐতিহাসিক ইউরোপিয়ান ক্লাবে স্থাপিত স্মৃতি ফলক উন্মোচন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিপ্লব ও বিপ্লবী স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের উদ্যোগে বুধবার দুপুরে ইউরোপিয়ান ক্লাবে স্মৃতি ফলকটি উন্মোচন করেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রকৌশলী মো. আবদুল হাই। এসময় রেলের উর্ধতন কর্মকর্তা, শ্রমিক নেতা, স্মৃতি সংরক্ষন পরিষদের নেতৃবৃন্দ এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ঐতিহাসিক ইউরোপিয়ান ক্লাব প্রাঙ্গনে এ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে পূর্ব রেলের জিএম প্রকৌশলী মো. আবদুল হাই বলেন, কয়েকজন ইতিহাস সচেতন তরুণের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আমাদেরই উচিত ছিল আরও আগেই চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের স্মৃতি রক্ষার্থে উদ্যোগ নেয়। তিনি বলেন, আমাদের সমৃদ্ধ ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হবে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সেই সংগ্রামের পথ বেয়েই বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশ। তাই সেই উজ্জ্বল ইতিহাস জানতে হবে। সারাদেশের মানুষকে জানাতে হবে। চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের স্মৃতি রক্ষায় রেলওয়ে নিজস্ব কিছু উদ্যোগ অবিলম্বে গ্রহণ করবে। পাশাপাশি স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ এ বিষয়ে যেসব উদ্যোগ নেবে তাতেও আমরা সর্বাত্মক সহায়তা করব।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিপ্লব ও বিপ্লবী স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের উপদেষ্টা ইতিহাস গবেষক মুহাম্মদ শামসুল হক বলেন, অত্যন্ত কঠিন সময়ে চট্টগ্রামের বিপ্লবীরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন করেছিলেন। তারা অনেক কষ্ট সহ্য করে ত্যাগের বিনিময়ে প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করতে চেয়েছিলেন। আমাদেরকে ইতিহাস সচেতন হতে হবে। তা না হলে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্ম জানতে পারবে না কত ত্যাগের বিনিময়ে এই স্বাধীন বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের সব স্মৃতি সংরক্ষণে পরিষদ ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করবে।
পরিষদের আহ্বায়ক আলমগীর সবুজ বলেন, ১৯৩০ সালে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল। এরই পরম্পরায় বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ। স্বাধীন বাংলাদেশে এত বছর পেরিয়েও অনেকে জানেন না ইউরোপিয়ান ক্লাবটি কোথায়। ভারতে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের স্মৃতি রক্ষায় অনেক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অথচ আমাদের এখানে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। তাই সাধারণ মানুষকে চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন করতে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। আশাকারি সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা এ উদ্যোগ নেবে।
পূর্ব রেলে নির্বাহী প্রকৌশলী-২ আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, ইতিহাসের ভিত্তিভূমিতেই সমৃদ্ধ ভবিষ্যত বির্ণিমান সম্ভব। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পথ ধরেই ভাষা আন্দোলন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। তাঁরাই আমাদের পথ দেখিয়েছিলেন স্বাধীন দেশের জন্য কতটা আত্মত্যাগী হতে হয়। বিপ্লবীদের স্মৃতি সংরক্ষণ আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
পরিষদের আহ্বায়ক আলমগীর সবুজের সভাপতিত্বে সদস্য প্রীতম দাশের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক ইছা-ই-খলিল, ডিআরএম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, নির্বাহী প্রকৌশলী-২ আবুল কালাম চৌধুরী, নির্বাহী প্রকৌশলী-১ রফিকুল ইসলাম, রেলওয়ে শ্রমিক লীগের প্রধান উপদেষ্টা সিরাজুল ইসলাম, রেলওয়ে সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলী, রেলওয়ে এমপ্লয়ীজ লীগ সভাপতি কাজী আনোয়ারুল হক হনি, রেলওয়ে কারিগরী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এস কে বারী। সভায় উপস্থিত ছিলেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সদস্য সচিব সাংবাদিক মিঠুন চৌধুরী, পরিষদের সদস্য সাইদুল ইসলাম, আলোকময় তলাপাত্র, নিজাম হায়দার সিদ্দিকী, আহসানুল কবির রিটন, প্রীতম দাশ, পার্থ প্রতিম বিশ্বাস, আবদুল্লাহ আল মামুন, মোরশেদ তালুকদার, সাংবাদিক মাকসুদ আহমেদ, নাসরিন জাহান, মো. হাসান, নয়ন চক্রবর্তী, আমিনুল ইসলাম মুন্না, মো. আলমগীর, পরিবেশ আন্দোলন সংগঠক শরীফ চৌহান, সাংস্কৃতিক সংগঠক রুবেল দাশ প্রিন্স, সৈয়দ আতিকুর রহমান, যুবলীগ নেতা এম এ মান্নান শিমুল।
অনুষ্ঠান শেষে পূর্ব রেলের শীর্ষ কর্মকর্তারা স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে ঐতিহাসিক ইউরোপিয়ান ক্লাব প্রাঙ্গন ঘুরে দেখেন। অনুষ্ঠান শেষে ভারতীয় পর্যটকদের সাত জনের একটি দল ইউরোপিয়ান ক্লাব পরিদর্শনে এলে তারা নতুন স্থাপিত স্মৃতি ফলকটি দেখেন এবং এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন