রাজশাহীতে থানার ভেতর এক আওয়ামী লীগ নেতাকে পিটিয়েছে পুলিশ। শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে জেলার গোদাগাড়ী মডেল থানায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশি লাঞ্ছনার শিকার ওই আওয়ামী লীগ নেতার নাম আবদুল মালেক (৪৮)। তিনি গোদাগাড়ী পৌরসভা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি।
আবদুল মালেক জেলা আওয়ামী লীগেরও সদস্য ছিলেন। গোদাগাড়ী পৌরসভার সারেংপুর কলেজপাড়া এলাকায় তার বাড়ি। পুলিশ তাকে মারধর করায় বিক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলা সদর ডাইংপাড়া মোড়ে অবস্থান নিয়ে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় সড়কের দু’পাশে ঢাকা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জমুখি বহু গাড়ি আটকে পড়ে। দীর্ঘ এলাকাজুড়ে যানজটেরও সৃষ্টি হয়। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা গোদাগাড়ীর ওসিসহ জড়িত সব পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে স্লোগান দেন। পরে রাত ৯টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
ভুক্তভোগী আবদুল মালেক জানান, বর্তমানে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক সংষ্কারের কাজ চলছে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে স্থানীয়রা অভিযোগ তোলেন, কাজের মান খুবই খারাপ। এ নিয়ে সারেংপুর কলেজপাড়া এলাকায় ঠিকাদারের লোকজনের সঙ্গে স্থানীয়দের কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় ঠিকাদার ফোন করে পুলিশ ডাকেন। পুলিশ সারেংপুর মহল্লার শহিদুল ইসলাম (৩৫) নামে এক যুবলীগ নেতাকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। এরপর বিকেলে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মালেক স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা সুলতানুল বাবুকে (২৫) নিয়ে বিষয়টি মিমাংসার জন্য থানায় যান। আবদুল মালেক গেলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিপজুর আলম মুন্সি শহিদুলকে ছেড়ে দেন।
এরপর তারা থানা থেকে বের হয়ে আসছিলেন। এ সময় থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আহসানুল হক ছাত্রলীগ নেতা সুলতানুল বাবুকে আটক করেন। তার যুক্তি-বাবুও ঠিকাদারদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা করেছিলেন। এ সময় আবদুল মালেক তাকে আটকে বাঁধা দেন। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি শুরু হয়।
আবদুল মালেক বলেন, ‘হঠাৎ তেড়ে গিয়ে থানার এসআই আহসানুল হক আমার বাম গালে জোরে একটি চড় মারেন। আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে যাই। এরপরই এএসআই শাহিন আলী কিল-ঘুষি মারতে শুরু করেন। আরও কয়েকজন দারোগা-কন্সটেবল মারধর করেন। আমি সবাইকে চিনি না। ওসির সামনেই এমন ঘটনা ঘটে। পরে ওসি আমাকে থানা থেকে বের করে দিয়ে চলে যেতে বলেন।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাতে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে ডাইংপাড়া মোড়ে অবস্থান নেন। খবর পেয়ে পুলিশের একটি পিকআপ ওসিকে নিয়ে সেখানে যায়। এরপর গাড়ি থেকে ওসি নামলেই বিক্ষুব্ধরা পিকআপকে ধাওয়া দেন। এ সময় ওসিকে ফেলে রেখেই পিকআপটি থানার দিকে টান দেয়। এরপর বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা ওসিকে ঘিরে ধরেন। ওসি তখন শামসুল হক নামে এক ব্যক্তির জুতার দোকানে গিয়ে ঢুকে পড়েন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের শান্ত করে অবরুদ্ধ ওসিকে মুক্ত করেন। এরপর অভিযুক্তদের শাস্তির আশ্বাস দিলে সড়ক অবরোধও তুলে নেন নেতাকর্মীরা।
এদিকে আবদুল মালেককে মারধরের ঘটনায় গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অয়েজ উদ্দিন বিশ্বাস ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বদিউজ্জামান ওসিসহ জড়িত সব পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের বাসিন্দা এসআই আহসান শিবিরের আর সিরাজগঞ্জের বাসিন্দা এএসআই শাহিন ছাত্রদলের ক্যাডার ছিলেন। এ জন্যই তারা আওয়ামী লীগ নেতার গায়ে হাত তুলেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি হিপজুর মুন্সি বলেন, মারধরের ঘটনা ঘটেনি। ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছিল। তিনি ওই দুই দারোগাকে আবদুল মালেকের কাছ থেকে মাফ চাইয়ে নিয়েছেন। তবে এসআই আহসানুল হক দাবি করেছেন, ধাক্কাধাক্কিও হয়নি। শুধু কথা কাটাকাটি হয়েছে। এদিকে মোবাইল বন্ধ থাকায় এএসআই শাহিনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিডি প্রতিদিন/৯ জুন ২০১৭/হিমেল