ঈদের আগে-পরে ৩ দিন বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছে ১৪ শিশু সহ ৪০জন। এর মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক ২৪জন মারা গেছে ঈদের দিন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা না পেয়ে এই তিনদিনে স্বেচ্ছায় হাসপাতাল ছেড়েছে ১৬৩জন। গুরুতর অবস্থায় ঢাকা সহ বিভিন্ন ক্লিনিকে চলে গেছেন ৬১জন। ছাড়পত্র নিয়ে ৪৩২জন বাড়ি ফিরে গেছেন। এই তিনদিনে শেরে-ই বাংলা মেডিকেলে নতুন ভর্তি হয়েছেন নারী ও শিশু সহ বিভিন্ন বয়সের ৮১১জন রোগী। গড়ে রোগী ভর্তি ছিলো ১ হাজার ১শ’ ১৩জন।
এদিকে ঈদের আগে বন্ধের সময় হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় সংকট হবেনা বলে কর্তৃপক্ষের ঘোষণা থাকলেও বাস্তবতা ছিলো ভিন্ন। ছুটি ছাড়াও অলিখিতভাবে ডাক্তার-নার্স-কর্মচারীরা ছুটি কাটানোয় বেহাল হয়ে পড়েছিলো হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা।
তবে কঠোর নজরদারীর কারণে হাসপাতালের সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় তোমন কোন সমস্যা হয়নি বলে জানিয়েছেন পরিচালক ডা. এসএম সিরাজুল ইসলাম।
হাসপাতালের রেজিস্ট্রার সূত্র অনুযায়ী ঈদের আগের দিন শুক্রবার মারা গেছে ৮ জন রোগী। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা সহ বিভিন্ন ক্লিনিকে চলে গেছেন ৩২ জন। প্রয়োজনীয় সেবা না পেয়ে স্বেচ্ছায় হাসপাতাল ছেড়েছেন ৬৯ জন। সুস্থ্য হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৩৯ জন। ওই দিন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ২৬১ জন। মোট রোগী ছিলো ১০৩০ জন।
ঈদের দিন শনিবার রেকর্ড সংখ্যক ৯ শিশু সহ ২৪ জন মারা গেছে মারা গেছে শেরে-ই বাংলা মেডিকেলে। অন্য হাসপাতাল-ক্লিনিকে চলে গেছেন ১৩ জন। স্বেচ্ছায় হাসপাতাল ছেড়েছে ৬৩ জন। ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি গেছে ১৩৯জন। ওইদিন নতুন ভর্তি হয়েছে ২০৭জন। মোট রোগী ভর্তি ছিলো ১১২২জন।
ঈদের পর দিন গত রবিবার মারা গেছে ৮ জন। উন্নত চিকিৎসার আশায় অন্যত্র চলে গেছেন ১৬ জন। সন্তোষজনক চিকিৎসা না পেয়ে স্বেচ্ছায় বাড়ি ফিরেছেন ৩১ জন। ১৫৪ জন ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। ঈদের পরদিন রোগী ভর্তি হয়েছে সাম্প্রতিক রেকর্ড সংখ্যক ৩৪৩ জন। ওইদিন মোট রোগী ভর্তি ছিলো ১১৮৯ জন।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ৩৫ জন অন্যান্য ধর্মাবলম্বী সহ হাসপাতালের রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার, ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার ও ইনডোর মেডিকেল অফিসার মোট ১৩০ জন। মুসলিমদের মধ্যে ঈদের ছুটি নিয়েছেন মাত্র ১০জন। কিন্তু ছুটি ছাড়াও অলিখিতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন ইসলাম ধর্মাবলম্বী বেশীরভাগ চিকিৎসক। এমনকি জরুরী বিভাগে ১০ জন চিকিৎসকের স্থলে ৩দিনে দায়িত্ব পালন করেছেন মাত্র ৩ জন চিকিৎসক।
২৫জন সংখ্যালঘু সহ হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকের সংখ্যা ১৭০ জন। এদের মধ্যে বরিশালে স্থায়ীভাবে বসবাস করে অন্তত ৩০জন। ৩দিনে অর্ধেকের বেশী ইন্টার্ন চিকিৎসক কর্মস্থলে ছিলেন অনুপস্থিত।
নার্সদের ক্ষেত্রেও ঘটেছে একই ঘটনা। ২৪৫ জন হিন্দু, ২৯জন খ্রিস্টান এবং মুসলিম ৪৫১জন সহ হাসপাতালের মোট নার্স ৭৩৫জন। এদের মধ্যে অমুসলিম নার্সরাই ছিলো ঈদের আগে-পরের ৩দিন হাসপাতাল ভরসা। তবে সোমবার ঈদের দ্বিতীয় দিনে কর্মস্থলে ফিরেছেন অনেক নার্স।
সব চেয়ে ভয়াবহ সংকট ছিলো আয়া, ঝাড়ুদার সহ চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের। এমনিতেই চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর চরম সংকট। এরমধ্যে আবার অসুস্থতা সহ নানা কারনে কাজে আসেনি কর্মচারীদের একটি অংশ।
চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর চরম সংকটের কথা স্বীকার করে হাসপাতালের পরিচালক ডা. এসএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঈদের বন্ধে হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স কর্মরত ছিলো। তিনি নিজে প্রতিটি বিষয় গভীরভাবে নজরদারী করেছেন।
ঈদের দিন ২৪ রোগী মৃত্যুর বিষয়ে পরিচালক বলেন, এক দিনে ২৪ রোগী মারা যাওয়ার ঘটনা তিনি পর্যবেক্ষণ করেছেন। যারা মারা গেছে তাদের অবস্থা খুবই খাবার ছিলো। বিশেষ করে কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহনের পর শিশু মৃত্যুর বিষয়টি স্বাভাবিক। এছাড়া অতিরিক্ত এ্যাজমা, হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপ সহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত বেশ কয়েক জন রোগী মুমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে এসে মারা গেছে।
বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন