বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কৌশলী প্রচারনা চালিয়ে প্রতিনিয়ত আচরন বিধি লংঘন করে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অন্যান্য মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
নির্বাচনী আইন অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিক প্রচারনার নিয়ম থাকলেও গত ২৮ জুন মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন কৌশলে বিধি লংঘন করে প্রচারনার অভিযোগ উঠেছে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে।
মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রভাবশালী হওয়ায় আচরন বিধি লংঘনের বিষয়ে কোন প্রতিক্রিয়াও দেখাচ্ছেন না নগরবাসী। অপরদিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ও এ ব্যাপারে নিশ্চুপ রয়েছে বলে অভিযোগ সংশ্লিস্টদের।
বরিশাল সিটি নির্বাচনে এখন পর্যন্ত মাঠে রয়েছেন ৭ জন মেয়র, ১১২জন কাউন্সিলর ও ৩৭ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী। আগামীকাল ৯ জুলাই মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন এবং পরদিন ১০ জুলাই প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীদের মাঝে দেওয়া হবে প্রতীক বরাদ্ধ। আইনানুযায়ী এরপরই আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারনা চালাতে পারবেন প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীরা। কিন্তু বরিশালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ ৭ মেয়র প্রার্থী কর্মীসভা, মতবিনিময় এবং গনসংযোগের আড়ালে প্রতিদিন প্রচারনা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহ শনিবার সকালে নগরীর মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন কীর্তনখোলা নদীর দক্ষিনপ্রান্তে অবস্থিত সুবিধা বঞ্চিত চরজাগুয়া এলাকায় গনসংযোগ করেন। এ সময় সাদিক আবদুল্লাহ ওই এলাকার মানুষের বিভিন্ন নাগরিক সমস্যার কথা শোনেন এবং নির্বাচিত হলে সেগুলো সমাধানের আশ্বাস দেন।
এ সময় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রিয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম তোতা, দলের মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল, সাধারন সম্পাদক একেএম জাহাঙ্গীর, সহসভাপতি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু এবং মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন আহম্মেদ বীর বিক্রম সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বরিশাল নগরীতে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা অফিসে গনসংযোগ এবং মতবিনিময় করেন। বিকেলে তিনি নগরীর পশ্চিম কাউনিয়ার নিজ বাস ভবনে ১৫ নম্বর এবং ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেন।
অপরদিকে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরীর অক্সফোর্ড মিশন রোডের নিজ বাসভবনে সুধীজন সহ বিভিন্ন ওয়ার্ড এবং ভোট কেন্দ্র ভিত্তিক জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন।
এছাড়া কমিউনিস্ট পার্টির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট এ কে আজাদ, বাসদের ডা. মনিষা চক্রবর্তী এবং খেলাফত মজলিসের প্রার্থী এ কে এম মাহবুব আলমও গতকাল নগরীর বিভিন্ন স্থানে গনসংযোগ করেন।
শুধু মেয়র প্রার্থীরাই নয়, নগরীর ৩০টি সাধারন ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্ধি ১১২ প্রার্থী এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৭জন প্রার্থী গত কয়েক দিনের মতো গতকালও স্ব-স্ব ওয়ার্ডে গনসংযোগ করেন। সংশ্লিস্ট এলাকার ভোটার ও প্রার্থীদের নিজ নিজ দলের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, মেয়র প্রার্থীরা গনসংযোগের আড়ালে প্রকারান্তরে তাদের দলের প্রতীকে ভোট চেয়েছেন। কর্মীসভায়ও দলের প্রতীকের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান জানানো হচ্ছে।
তবে মেয়র প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়ার কথা অস্বীকার করে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও দলের মেয়র প্রার্থীর মূখপাত্র অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গনসংযোগ করার ক্ষেত্রে কোন আইনী বাধ্যবাধকতা নেই। তাদের প্রার্থী জনগনের সমস্যার কথা শুনেছেন এবং দোয়া চেয়েছেন মাত্র।
মহানগর বিএনপির সহকারী সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিন বলেন, তাদের মেয়র প্রার্থী এর আগেও ৫বার সদর আসনে এবং একবার সিটি করপোরেশনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনী আচরন বিধি সম্পর্কে তিনি ভালোভাবেই ওয়াকিবহাল আছেন। আচরনবিধি মেনেই তাদের মেয়র প্রার্থী কর্মীসভা সহ গনসংযোগ করছেন। কর্মী সভায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানানো হচ্ছে। গনসংযোগকালে চাইছেন দোয়া।
জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপসের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক মহসিন-উল ইসলাম হাবুল বলেন, তাদের প্রার্থী ধারাবাহিকভাবে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে গনসংযোগ এবং কর্মীসভা করছেন। এতে তারা কোন আইন ভঙ্গ করছেন না।
মেয়র প্রার্থীদের মতো সংরক্ষিত ও সাধারন কাউন্সিলর প্রার্থীরাও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন এবং বিভিন্ন স্থানে গনসংযোগ করছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিস্ট ওয়ার্ডের ভোটাররা।
আইন বর্হিভূত প্রচারনার বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মেয়র প্রার্থীরা আচরন বিধি লংঘন করে প্রচারনা চালাচ্ছেন বলে তার কাছেও খবর রয়েছে। কিন্তু কেউ যদিও তাদের প্রচারনার খবর আগেভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে অবহিত করেন, তাহলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, তাৎক্ষনিক প্রচারনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকেই পাওয়া যায়না। এতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তারপরও আগামী ১০ জুলাই প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার সময় মেয়র সহ সকল প্রার্থীকে যথাযথভাবে নির্বাচনী আচরনবিধি অনুসরন করার তাগিদ দেওয়া হবে। এরপরও কেউ আইন ভঙ্গ করলে সংশ্লিস্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
বিডি প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর