বরিশাল মহাশ্মশানে অনুষ্ঠিত হয়েছে ভারত উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ দিপাবলী উৎসব। তিথি অনুযায়ী গত সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় দুই শতাব্দীর পুরোনো বরিশাল মহাশ্মশানের শুরু হয় এই মহাশ্মশানের ১৬৮ তম দিপবালী উৎসব। তবে মূল পর্ব শুরু হয় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এবং শেষ হয় রাত সাড়ে ৯টায়।
কয়েক হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বী যাদের স্বজন চির নিদ্রায় শায়িত আছেন বরিশাল মহাশ্মশানে, তারা এসেছিলেন সমাধিতে আলোক প্রজ্জলন করতে। কালী পূজার সময়ে দিপাবলী উৎসবের সময়টাতে চেনার উপায় থাকে না চিরচেনা এই মহাশ্মশানকে। অন্ধকার এই বিরান ভূমিতে জ্বলে ওঠে শত সহস্র দ্বিপশিখায়। স্বজনদের সমাধি ভরে ওঠে ফুল-ফলাদিতে। পূজা, যোগ, ভোগ, বন্দনা আর চন্ডিপাঠে পূণ্যভূমিতে পরিণত হয়ে ওঠে মহাশ্মশান।
মহাশ্মশানে প্রয়াতের সমাধীতে আলোক প্রজ্জলন করতে আসা রেখা রানী রায়, ঝুমুর সাহা ও জয়া মিত্র সহ অন্যান্যরা জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস কালি পূজার ভূত চতুর্দশী তিথিতে সমাধীর কাছে পূজা অর্চনা করলে প্রয়াত ব্যক্তির আত্মা শান্তি লাভ করে। তাই আত্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি প্রয়াত প্রিয়জনের উদ্দেশ্যে তার সমাধিস্থলে নিবেদন করা হয় প্রয়াতের পছন্দের নানা ধরণের খাবার। সবকিছু করা হয় তিথি থাকা অবস্থায়। এছাড়া সমাধীর পাশে মোমবাতি প্রজ্জলন করে প্রয়াতের আত্মার শান্তি কামনা করেন স্বজনরা।
বিশ্বের বিভিন্ন স্থান এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এবারও সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এসেছেন বরিশাল মহাশ্মশানে। স্বজনদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো সমাধিস্থল। কেউ সমাধীর পাশে থেকেছেন নিরব, আবার কেউ নিরবে ফেলেছেন চোখের অশ্রু। এবারে দিপাবলী এবং কালী পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে একই দিনে।
মঙ্গলবার রাতে বরিশাল মহাশ্মশান পরিদর্শনে এসেছিলেন বিভাগীয় কমিশনার রাম চন্দ্র দাস, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোশারফ হোসেন, জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান সহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। তারা সেখানকার সার্বিক পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সভাপতি মানিক মুখার্জী কুডু বলেন, বরিশাল মহাশ্মশানের এই দিপাবলী উৎসব ভারত উপমহাদেশের সর্বচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। দেশ-বিদেশে থেকে হাজার হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বী এই অনুষ্ঠানে আসায় দিপাবলী অনুষ্ঠান পরিণত হয় মিলনমেলায়।
দিপাবলী উৎসবকে কেন্দ্র করে মহাশ্মশান এলাকায় আয়োজন করা হয়েছে মেলার। মহাশ্মশানে দিপাবলী অনুষ্ঠান উৎসবমুখর করতে অতীতের মতো স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগসহ সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে কর্তৃপক্ষ।
মহাশ্মশান রক্ষা কমিটি সূত্র জানায়, ৫ একর ৯৬ শতাংশ মহাশ্মশানের পুরনো শ্মশানের অধিকাংশ সমাধি ধংস হয়ে গেলেও এখনো সেখানে ব্রক্ষ্মণদের ২/৩টি এবং রূপসী বাংলার কবি জীবনান্দ দাসের পিতা সত্যানন্দা দাস ও পিতামহ সর্বানন্দা দাস, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ বিপ্লবী দেবেন ঘোষ, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী মনোরমা মাসি মা, শিক্ষাবীদ কালিশ চন্দ্র ঘোষসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সমাধি রয়েছে।
নতুন পুরনো মিলিয়ে মহাশ্মশানে ৬১ হাজারেরও বেশি সমাধি রয়েছে। এর মধ্যে ৫০ হাজারের অধিক পাকা, ১০ হাজার কাঁচা মঠ এবং ৮শ’ মঠ রয়েছে যাদের স্বজন এই দেশে নেই। সেই সব মঠগুলো হলুদ রং করা হয়েছে। স্বজন না থাকা মঠগুলোতে কমিটির পক্ষ থেকে মোমবাতি প্রজ্জলন করা হয় বলে জানিয়েছেন আয়োজন কর্তৃপক্ষ। ১৯২৭ সাল থেকে ওই স্থানে শ্মশান দিপাবলী উৎসব পালিত হয়ে আসছে।
বিডি প্রতিদিন/৬ নভেম্বর ২০১৮/হিমেল