প্রেসক্লাব মোবাইল মার্কেটের গেটের সামনে পড়ে আছেন আশি-ঊর্ধ্ব বৃদ্ধা হামিদা। চোখে-মুখে রাজ্যের হতাশা। শরীরের কাপড়টিও অপরিষ্কার। দেহের চামড়ায় ভাঁজ পড়ে রগ গুলোও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যেখানে তিনি শুয়ে আছেন এর পাশেই দোকান করতো বৃদ্ধার স্বামী নাঈমুল্লাহ।
গত রবিবার সেখানেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পড়ে থাকেন ওই বৃদ্ধা। ফেলে যায় তারই বড় মেয়ে পলি।
অভুক্ত হামিদা কথা বলার শক্তিটুকুও যেনো হারিয়ে ফেলেছেন। বিড়বিড় করে পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানুষদের উদ্দেশে করে বলছেন, ‘বাবা আমার একটা ব্যবস্থা কইরা দেন, আমি কই যামু, রাতে চোখে দেহি না, আমারত কেউ নাই।’ তখন চোখের পানিতে গাল ভিজে একাকার।
কথা হয় বৃদ্ধা হামিদা খাতুনের সাথে। জানান, ‘রবিবার সকালে উঠে হাত মুখ ধোয়ার পর একটা রুটি খাওয়াইছে মেয়ে। এর পর বলে চল, আইজ তরে মমসিং থইয়া আসব। আগে আমারে অনেক দেখছে, ইদানিং কের লাইগা আমার লগে এমডা লাগাইছে। সে কয় তোই আমার মা না, আমি তোর মাইয়া না। আমারে কয় এইহানে বইয়া বইয়া খাস, তোর বাপ দাদার কামাই, কিছু দিছস আমারে। এই কয়ে আমারে গাড়িত তুলে এইহানে রাইখা চইলা গেছে। যাওয়ার সময় আমি কইছি আমারে খাওয়ার কিছু দেয়া যা, রাও করল না, দৌঁড়ইয়া গেছে গা।’
তিনি জানান, তার মেয়ের নাম পলি। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে একটি চায়ের দোকান রয়েছে মেয়ের জামাই আলমগীরের। তার ঘরেও রয়েছে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে।
স্থানীয় পান দোকানী সুজন জানান, ‘মধ্য বয়সী এক নারী একটি অটোরিকশা করে এই বৃদ্ধাকে এনে এখানে ফেলে রেখে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেও পরিবারের কেই নিতে আসেনি।’
তিনি আরো জানায়, ‘এই নারীর স্বামী নঈমুল্লা এক সময় শহরের সি কে ঘোষ রোড এলাকায় পান সিগারেটের দোকান করতেন। সেও গত হয়েছেন প্রায় এক যুগ আগে। এরপর থেকে স্বামীর সূত্রে সেও শহরের সি কে ঘোষ রোডের একটি মার্কেটের সামনে বসে সিগারেট বিক্রি করত। বছর পাঁচেক আগে বার্ধ্যকের ভারে আশ্রয় মেলে বড় মেয়ে পলির কাছে। সেখানে লাঞ্চনা, অপমান আর মারধর ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। ছোট মেয়ে মলি, স্বামী হারা, সেও খবর নেয় না। রবিবার সকালে বড় মেয়ে পলি একটি অটোরিকশা করে হালুয়াঘাট থেকে এনে সেই সি কে ঘোষ রোডের একটি মার্কেটের সামনে ফেলে রেখে যায়।’
তবে সন্ধ্যার পর বৃদ্ধা হামিদার ঠাঁই হয় প্রেসক্লাব মার্কেটের পরিছন্নকর্মী আঁখির পাটগুদামস্থ বাসায়। আখি বলেন, আমারও বাবা মা আছেন। একজন বৃদ্ধা এভাবে রাস্তায় পড়ে থাকবে, এটা আমার কাছে খারাপ লাগছে। এই বিবেকের তাড়নায় আমার বাসায় নিয়ে যাচ্ছি। আর তাকে আমি আগে থেকেই চিনি এবং নানী বলে ডাকি।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন