১৯ নভেম্বর, ২০১৯ ২২:১৮

ফিটনেসবিহীন বাস চলছে না রাজশাহীতে, দুর্ভোগেও সন্তোষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

ফিটনেসবিহীন বাস চলছে না রাজশাহীতে, দুর্ভোগেও সন্তোষ

ফাইল ছবি

নতুন পরিবহন আইনের ভয়ে রাজশাহীতে হঠাৎ করেই সোমবার বন্ধ হয়ে যায় আন্তঃজেলা ‍রুটের সব বাস। এরপর দিনভরই চলে অঘোষিত ধর্মঘট। তবে রাজশাহী-ঢাকা রুটের বাস চলাচল স্বাভাবিক থাকে আগের মতই। সন্ধ্যায় একটা দুইটা করে আবারও আন্তঃজেলা রুটের বাস চলাচল শুরু হয়। তবে নওগাঁ-রাজশাহী ও রাজশাহী-চাঁপাইনবগঞ্জ রুটের বাস চলাচল শুরু হলেও অন্য রুটের আন্তঃজেলা বাস ছিল বন্ধ। আর সংখ্যায় কম হওয়ায় দিনভর দুর্ভোগে থাকা সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি কাটেনি। এছাড়া বাস চলাচল বন্ধ না চালু এই বিষয়টি নিয়েও ধন্ধে পড়েন যাত্রীরাও। সে বিষয়টি পরিষ্কার হয় মঙ্গলবার।    

মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজশাহীর ভদ্র স্মৃতিঅম্লান চত্বর, শিরোইল বাস টার্মিনাল, গৌরহাঙ্গা রেলগেট, বিন্দুর মোড়, সিটিবাইপাস বাসস্টপেজ, কাশিয়াডাঙ্গা মোড়, নওদাপাড়া আমচত্বর এলাকা ঘুরে দেখা যায় বাস চলছে। তবে সবগুলো বাসই প্রায় নতুন এবং ঝকঝকে। মোটামুটি ফিটনেস আছে এমন সব বাসই নির্বিঘ্নে রাজশাহী-নওগাঁ, রাজশাহী-চাাঁপাইনবগঞ্জ, রাজশাহী-বগুড়া, নাটোর, পাবনা ও জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন আন্তঃজেলা রুটে চলাচল করছে। 

আজ ফিটনেসবিহীন কোনো বাস চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে না। এতে জনমনে একদিকে যেমন সন্তোষ দেখা দিয়েছে ‍তেমনি আবার সমান দুর্ভোগও রয়েছে। কারণ পরিবহন শ্রমিকরা ফিটনেসবিহীন বাস না চালানোয় সড়কে পরিবহনের সংখ্যা কমে গেছে। বিশেষ করে ফিটনেস আছে এমন বাসের সংখ্যা খুবই কম। ফলে সব মিলিয়ে বাস ধর্মঘট না থাকলেও এর দুর্ভোগ কাটছে না যাত্রীদের। 

রাজশাহী থেকে পাবনার বেড়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া রজনীগন্ধা পরিবহনের চালক শহিদুল আলম বলেন, নতুন পরিবহন আইন কার্যকরের পর প্রথম থেকেই সাজা ও জরিমানার অর্থ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছেন বাসমালিক এবং পরিবহন শ্রমিকরা। কারণ সড়কে চলা বেশিরভাগ বাসেরই ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন আছে। তাই সড়কে নামলে জেল-জরিমানার ভয় তো রয়েইছে। এ জন্য এখন অনেকে পরিবহন মালিক তাদের বাস চালাচ্ছেন আবার অনেকে বন্ধও রেখেছেন। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। এ জন্য সড়কে এখন ফিটনেসবিহীন বাস চলাচল করছে না মন্তব্য করেন এই চালক।

রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ আন্তঃজেলা রুটে চলাচলকারী ঝরনা পরিবহনের মালিক রহিদুল আলম বলেন, তার বাসের চালককে একটি ট্রিপের জন্য ৫০০ টাকা দিতে হয়। হেলপারকে ২০০ টাকা। আর যা ভাড়া ওঠে তা দিয়ে পুলিশের জরিমানার ২৫ হাজার টাকা উঠবে না। বাড়ি থেকে নিয়ে জরিমানা দিতে হবে। তাই আইন সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত তার মত অনেক বাসমালিকের পক্ষেই সড়কে বাস চালানো সম্ভব হবে না। 

এদিকে, সড়কে বাস কম থাকলেও নতুন আইন কার্যকরের বিষয়টিক স্বাগত জানিয়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। আইনটি কার্যকারিতা শেষ পর্যন্ত থাকলে আর এ জন্য সবাই কিছুটা কষ্ট স্বীকার করলে সড়কে পরিবহনের নৈরাজ্য কমবে এবং মৃত্যুর মিছিলও থামবে বলে মন্তব্য এন ভুক্তভোগীর। তার মত এমন অভিন্ন মত অধিকাংশ যাত্রীরই। 

মহানগরীর বিন্দুর মোড় বাস স্টপেজে বাসের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রী আরশাদুল হক বলেন, বাংলাদেশ অনেক আইনই তৈরি হয়। কিন্তু এর কোনো কার্যকারিতা থাকে না। তাই আইন থেকেও তা সাধারণ মানুষের কাজে আসে না। আর কোনো আইন বাস্তবায়ন শুরু হলে প্রথম দিকে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা আসবেই। তবে লক্ষ্য স্থির থাকলে এগুলো এক সময় কাটিয়েও ওঠা যাবে।

কিন্তু পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হয়ে বা নতজানু হয়ে সরকার যদি নিজ অবস্থান থেকে সড়ে আসে তাহলে এই আইনেরও ভবিষ্যত অন্য আইনগুলোর মতই হবে। এজন্য সাধারণ যাত্রীদের কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হবে। কিন্তু কষ্ট স্বীকার করে এর পক্ষে সবাই অবস্থান নিলে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা আর সাধারণ মানুষ ও সরকারকে জিম্মি করতে সাহস পাবেনা। যেসব যানবাহনের ফিটনেস আছে সড়কে তারাই নামবে। এটাই নিয়ম থাকা উচিৎ বলে মন্ত্যব্য এই যাত্রীর।
  
আর বাস মালিক ও চালকদের অনেকেই নিজে থেকেই বাস চলাচল বন্ধ করে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন, রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, বাস চলাচল বন্ধের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত তাদের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। কেউ তাদের সাথে আলোচনাও করেনি। শ্রমিকদের কথায় মনে হয়েছে, কেবলমাত্র নতুন পরিবহন আইনের ২৫ হাজার টাকা জরিমানা ও পাঁচ বছরের সাজার ভয়েই কেউ কেউ তাদের বাস চলাচল আপাতত বন্ধ করে রেখেছেন। তবে রাজশাহী-ঢাকা, রংপুর, নাটোর, বগুড়া, পাবনা, নওগাঁসহ বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল করছে।

রাজশাহী বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী (ইঞ্জিন) এএসএম কামরুল হাসান বলেন, নতুন আইন বাস্তবায়নের ব্যাপারে তারা কঠোর অবস্থানেই আছেন। তাদের পক্ষ থেকে বিষয়টি মনিটরিংও করা হচ্ছে। তারা নিয়মিতভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছেন। 

এছাড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া কোনোভাবেই যানবাহনের ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদান করা হচ্ছে না। ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে লিখিত ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। এর বাইরে কোথাও কোনো অনিয়ম চোখে পড়লে সরাসরি তাকে অবহিত করারও অনুরোধ জানান বিআরটিএ’ রাজশাহী সহকারী পরিচালক।

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর