দোতলা ছোট লঞ্চ মর্নিং বার্ড। অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে মুন্সীগঞ্জ থেকে নিরাপদেই ঢাকার সদরঘাটে এসে পৌঁছে। গন্তব্যস্থল শ্যামবাজার কাঠপট্টি ঘাট থেকে লঞ্চটির দূরত্ব আর মাত্র ২০০ হাত। লঞ্চের যাত্রীরা নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু তীরে ভেড়া হলো না। পেছনের দিকে আসতে থাকা দৈত্যাকার ময়ূর-২ লঞ্চ ছোট মর্নিং বার্ডকে সজোরে ধাক্কা দেয়। তাতেই কাত হয়ে ডুবতে থাকে লঞ্চটি। মহাবিপদের আঁচ করতে পারা যাত্রীদের তখন গগনবিদারী আর্তনাদ। ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকারে প্রকম্পিত হয় বুড়িগঙ্গার দুই তীর। সে চিৎকার বেশিক্ষণের নয়। মুহূর্তে ডুবন্ত ছোট লঞ্চটির ওপর পুরো দেহ উঠিয়ে দেয় ময়ূর। তলিয়ে যায় যাত্রীভর্তি আস্ত লঞ্চটি।
যাত্রীদের বাঁচাতে কেউ এগিয়ে যাওয়ার সুযোগই পায়নি। কিছু সময় পরই একে একে ভেসে উঠতে থাকে লাশ। শিশুর লাশ ভাসতে থাকে একদিকে। সেটি নৌকায় তুলতেই দেখা মেলে নারীর লাশ। সেটি তুলতেই ভেসে ওঠে পুরুষের লাশ। মাঝনদীতে নৌযানে সারি করে রাখা হয় লাশগুলো। বুড়িগঙ্গায় যেন লাশের ভেলা। প্রিয় মানুষের মৃত্যুতে ধৈর্যের বাঁধ মানেনি স্বজনদের। নৌকা নিয়ে ছুটে যান মাঝনদীতে সারি করে রাখা লাশের কাছে। বুকভাঙা কান্নার কাছে নিজেদের সঁপে দিচ্ছিলেন প্রিয় মানুষ হারানো স্বজনরা। তাদের বুক চাপড়ানো আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে বুড়িগঙ্গার আকাশ-বাতাস। নদীর দুই তীরে কেউ প্রিয়জনের লাশ পেয়ে কাঁদছেন, কেউ এপাশ-ওপাশ ছোটাছুটি করছেন স্বজনের খোঁজ না পেয়ে। ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ, নৌবাহিনীর উদ্ধারকর্মীরা সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩২ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন। সবাই মুন্সীগঞ্জের বাসিন্দা। যারা অফিসগামী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার।
এদিকে, বুড়িগঙ্গা নদীতে ডুবে যাওয়া লঞ্চ উদ্ধারের জন্য নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়‘ পানির উচ্চতার কারণে পোস্তগোলা সেতুর কাছে আটকে আছে। সোমবার রাত ৮টায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক শাহজাহান শিকদার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নদীর পানি বেশি হওয়ার কারণে বিআইডাব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় এখন পর্যন্ত পোস্তগোলা সেতুর কাছে আটকে আছে।’
বিডি-প্রতিদিন/শফিক