রংপুরে এক রাতের বৃষ্টিতে মহাপ্লাবন হয়েছে। ১১০ বছর আগে রংপুরে এমন বৃষ্টি হয়েছিল। বৃষ্টিতে নগরীর ৩৩ টি ওয়ার্ড, সড়ক, মহাসড়ক কোমর পানি পর্যন্ত তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৫ লাখের ওপর মানুষ। খাল বিল ও পুকুরের কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে রয়েছে নগরীর নিম্নাঞ্চলের মানুষ।
আবহাওয়আ অফিস জানিয়েছে, ১৫ ঘণ্টায় ৪৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া রাত ১১ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত নগরী ছিল বিদ্যুৎবিহীন। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কেও মারাত্মক বিঘ্নিত হয়। বেশ কিছু প্লাবিত এলাকার লোকজন স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রায় নিয়েছে।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যা থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাত হলেও রাত ১০ টা থেকে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। তা চলে সকাল ১০ টা পর্যন্ত। টানা বৃষ্টিতে নগরীর কামালকাছনা, শাহিপাড়া, খাসবাগ, মুন্সপাড়া, কামারপাড়া,শালবনসহ নগরীর দেড়শতাধিক পাড়া মহল্লা ২ থেকে ৩ ফিট পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। ভোগান্তিতে পড়ে নিম্নাঞ্চলের ৮ লাখ মানুষ। কাঁচা বাড়ির বাসিন্দারা ছিল চরম বিপাকে। অনেকের বাড়ি ও রান্নাঘরে পানি প্রবেশ করায় অনেকের বাড়িতে রান্না পর্যন্ত হয়। একাধারে বৃষ্টি এর ওপর মরার ওপর খড়ার ঘায়ের মত বিদ্যুৎ চলে যায়। অনেকের ঘরে পানি প্রবেশ ও বিদ্যুৎ না থাকায় তারা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে।কামালকাছনা এলাকার গৃহণী মনিরা বেগম জানান, তার ঘরে পানি ঢোকায় সারারাত নির্ঘুম কেটেছে। রান্না করতে পারেনি। হোটেল থেকে খাবার কিনে খেয়েছেন। মুন্সিপাড়া এলাকার রতন মিয়া বললেন বৃষ্টিতে তার ঘর ও উঠানে হাটু পানি। এদের মত কয়েক লাখ মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে। এজন্য তারা অপরিকল্পতি নগরায়নকে দায়ী করেছেন।
নগরীর প্রধান সড়ক জাহাজ কোম্পানি মোড়, টাউনহল চত্বর, কাচারি বাজার, গ্রান্ডহোটেল মোড়, স্টেশন রোড ছিল হাটু পানির নিচে। অন্যান্য সময় নগরীতে ব্যস্ততা দেখা গেলেও রবিবারের চিত্র ছিল একেবারে ভিন্ন। নগরীতে অটো, রিক্সার চলাচল ছিল সামান্য। অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল বন্ধ। শ্রমজীবী মানুষেরা কাজ না পেয়ে ছিল বেকায়দায়।
এদিকে প্রবল বর্ষণের ফলে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় ছিল বস্তি এলাকার মানুষ। নগরীর কয়েকটি বস্তি ও কলোনির হাজার হাজার মানুষের রবিবার সারাদিন চুলা জ্বলেনি। কেউ কেউ খাবার বাইরে থেকে কিনে খেলেও অধিকাংশ গরীব মানুষই ছিল অর্ধঅহারে। এদিকে রংপুর নগরী ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলায় বৃষ্টিপাত হলেও তা ততটা প্রকোট ছিল না।
রসিকের প্যানেল মেয়র মাহামুদুর রহমান টিটু জানান, আমরা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মেয়র ও কান্সিলররা এলাকা ভাগ করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। নগরীর সেনপাড়া, মুলাটোল, রাধাবল্ববসহ বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্লাবিত লোকজনকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ে আশ্রিত পরিবারগুলোকে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানান, আমি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে যতটুটু জেনেছি তা হল ১৯১০ সালের দিকে রংপুরে এমন প্রবল বর্ষণ হয়েছিল। ১১০ বছর পরে আবার এমন বর্ষণ হল। শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রবিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৪৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল