এক হাজারের বেশি নারীর কাছ থেকে মাত্র দুই মাসে ৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার মূলহোতা মামুন হাসান মালিক ওরফে আদম সুফিকে (৪৫) গ্রেফতার করেছে রংপুর র্যাব-১৩। নীলফামারীর ডোমারে ভোগ্যপণ্য সমবায় সমিতির নামে টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা ঢাকা দিলে বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সাভার থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে র্যাব-১৩ এর সদর দফতরে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে গ্রেফতারের বিষয়টি জানান ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর আবদুল্লাহ আল মঈন হাসান।
তিনি জানান, গত বছরের নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে মামুন হাসান মালিক ওরফে আদম সুফি তার সহযোগীদের সাহায্যে নীলফামারী জেলার ডোমার থানার সাহাপাড়াস্থ জনৈক ছানু সরকারের প্রাক্তন কুইন্স কিন্টার গার্ডেন নামক স্কুল ঘরটি ভাড়া নিয়ে ‘ডোমার বাজার ভোগ্য পণ্য সমবায় সমিতি’ নামীয় ব্যানার লাগিয়ে এলাকার সহজ-সরল নারীদের টার্গেট করেন।
সমবায় সমিতির মাধ্যমে সদস্যগণ যে মূল্য দিয়ে পণ্য ক্রয় করতে ইচ্ছুক তাকে মূল্য বাবদ সেই পণ্যটি দেওয়া হবে এবং সাত দিনের মধ্যে মূল টাকাসহ ১০ শতাংশ থেকে থেকে ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ফেরত দেয়া হবে বলে ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী নারীদের প্রলুব্ধ করতে থাকে প্রতারক চক্রটি। সমবায় সমিতির মাধ্যমে কয়েকজন নারী সদস্য প্রাথমিকভাবে তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মূল টাকাসহ লভ্যাংশ প্রাপ্ত হওয়ায় এলাকার অধিক সংখ্যক নারী নিজেদের সহায় সম্বল বিক্রির অর্থ দিয়ে এই চটকদার সমিতির সদস্য হন।
সমবায় সমিতির আড়ালে এই প্রতারক চক্রটি মাত্র দুই মাসে এক হাজারের বেশি নারীর কাছ থেকে ৬ কোটি টাকা সংগ্রহ করে এবং একপর্যায়ে সমিতির অফিস বন্ধ করে পালিয়ে যায়। এ নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয় যে, খোয়া যাওয়া টাকা উদ্ধার করতে না পারায় ভুক্তভোগী কয়েকজন নারী তাদের স্বামী কর্তৃক তালাক প্রাপ্ত হন এবং একই ঘটনায় একজন নারী টাকা হারানোর আতঙ্কে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। টাকা হারিয়ে সর্বশান্ত সহস্রাধিক নারী এবং ওই কোম্পানির প্রায় শতাধিক ভুক্তভোগী নারীকর্মী গত বছরের ২০ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।
এছাড়াও ভুক্তভোগীরা টাকা উদ্ধারের জন্য নীলফামারী জেলার ডোমার থানায় গত ২৪ জানুয়ারি ৪ জন প্রতারকের নামে একটি মামলা এবং র্যাব-১৩ ও র্যাবের নীলফামারী কোম্পানি কমান্ডার বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারক আদম সুফি নীলফামারী জেলার ডোমার থানায় সংঘটিত প্রতারণার সাথে তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন এবং তার সাথে জড়িত অন্য প্রতারকদের আইনের আওতায় আনার জন্য কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর আবদুল্লাহ আল মঈন হাসান।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর