ব্র্যাক গত ৫০ বছর ধরে মানুষের, বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পাশেই আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের আরও নয়টি দেশে সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে স্বাবলম্বী করার যে কাজ করছে ব্র্যাক, তা আরও বেগবান হবে। ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের উন্নয়ন-দর্শন “যার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি, তাঁর কাছে আগে পৌছাতে হবে” – এই দর্শনকে অনুসরণ করেই ব্র্যাক তার আগামীদিনের কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
সোমবার (২১ মার্চ) ব্র্যাকের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি) মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠান হয়। দুই পর্বের এই অনুষ্ঠানে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সংস্থাটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন এর সাবেক কর্মীরা। সন্ধ্যায় দ্বিতীয় পর্বে উপস্থিত ছিলেন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, বিনোদন ও গণমাধ্যমের বিশিষ্টজনেরা। আলোচনা, নানা কার্যক্রমের ভিডিও প্রদর্শন আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দিনটি পালন করা হয়। ঢাকা ছাড়াও ব্র্যাকের বিভাগীয় অফিসগুলোতে এই দিনটি পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর প্রেরিত শুভেচ্ছা বাণী পাঠ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
এই দিনটিকে প্রতি বছরই ব্র্যাক ডে হিসেবে পালন করা হলেও সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এবার পেয়েছে ভিন্ন মাত্রা। এবার ব্র্যাক ডে উপলক্ষে ১৬ জন কর্মী পেয়েছেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ ভ্যালুজ অ্যাওয়ার্ড।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, “আমাদের প্রতিষ্ঠাতা বলতেন যে তিনি পুরুষদেরকে হারতে দেখলেও নারীদেরকে কখনও হারতে দেখেননি। তাই নারীর ক্ষমতায়ন সমাজের উন্নতির অন্যতম প্রধান নিয়ামক। ব্র্যাক এই বিষয়ে বরাবরই জোর দিচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “একটি প্রতিষ্ঠান টিকে থাকে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে। অতীতের মতো বর্তমান ও ভবিষ্যতেও নিজের প্রাসঙ্গিকতা প্রমাণের চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবেলা করবে ব্র্যাক। “
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের জন্ম ১৯৭২ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে। শুরুটা হয়েছিল সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত জনপদ শাল্লায়, প্রত্যাগত শরণার্থীদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজের মাধ্যমে। পরে ক্ষুদ্রঋণ, কুটিরশিল্পকে কেন্দ্র করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা, মানবাধিকার, সড়ক নিরাপত্তা, অভিবাসন, নগর উন্নয়নসহ নানামুখী কার্যক্রমে ব্র্যাক ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশ ও দেশের বাইরে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে ব্র্যাকই প্রথম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রেখেছে। বাংলাদেশসহ এশিয়া ও আফ্রিকার দশটি দেশের ১০ কোটিরও বেশি মানুষের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে আত্মনির্ভরতা অর্জনে কাজ করে চলেছে এই সংস্থা।
আশির দশকে দেশের প্রতিটি পরিবারে মায়েদের খাওয়ার স্যালাইন তৈরি করতে শেখান ব্র্যাকের মাঠকর্মী বাহিনী। এরপর প্রায় অর্ধেক বাংলাদেশে ব্র্যাকের মাধ্যমে টিকা দেওয়া হয়। এই দুই পদক্ষেপে নাটকীয়ভাবে শিশুমৃত্যু হ্রাস পায়।
ঝরেপড়া শিশুদের জন্য স্কুলের পাইলট প্রকল্প শুরু করে ব্র্যাক। পরবর্তীকালে এর ব্যাপক প্রসার ঘটে। আজ পর্যন্ত ব্র্যাকের স্কুলগুলো থেকে এক কোটি ৪০ লাখ শিশু মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে পরবর্তী ধাপে এগিয়ে গেছে। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। একই বছর ব্র্যাক ব্যাংকেরও সূচনা।
ব্র্যাকের বিশ্বখ্যাত আলট্রা পুওর গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রাম অতি দারিদ্র্য থেকে উত্তরণের পথ দেখায়। এই মডেল বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে যাত্রা শুরু করে ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল।
বর্তমানে নগর দারিদ্র্য নিরসন এবং যুব জনগোষ্ঠীর দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষভাবে কাজ করছে ব্র্যাক। স্মরণকালে দেশের সবচেয়ে বড় সংকট রোহিঙ্গা ও কোভিড-১৯ সংকটে সরকারের বৃহত্তম দেশীয় উন্নয়ন সহযোগী হিসাবে কাজ করছে এই সংস্থা। সরকারের আর্থসামাজিক নীতি-কৌশল প্রণয়ন প্রক্রিয়াতেও আরো বেশি সম্পৃক্ত হয়েছে।
ব্র্যাকের সকল কর্মসূচি, কার্যক্রম ও মডেল, সর্বোপরি ব্র্যাক ব্র্যান্ডটিই গড়ে উঠেছে নারীর ক্ষমতায়নকে কেন্দ্র করে। নারীর অন্তর্নিহিত সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশে কাজ করে চলেছে সংস্থাটি। ব্র্যাকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতের সমস্যার ক্ষেত্রগুলোকে আগাম চিহ্নিত করা ও সমাধান নির্দেশনায় সুবিধাবঞ্চিত মানুষ, অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী এবং সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ যে কাজ চলছে, ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল