নারায়ণগঞ্জ শহরের বাবুরাইল এলাকায় ১১ মাসের শিশু সন্তানকে জিম্মি করে এক গৃহবধূকে ৩ ঘণ্টা আটকে রেখে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার অভিযুক্ত পাঁচজনের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী নারীর স্বামী।
পরে ওই দিন রাতে এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামির মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে সদর মডেল থানা পুলিশের একটি টিম। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ বন্দরে গার্মেন্টকর্মী প্রেমিকাকে পার্কে ডেকে নিয়ে প্রেমিকসহ ৮ জন মিলে ধর্ষণ করে। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই শিশু সন্তানকে জিম্মি করে গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটলো। আজ বুধবার গ্রেফতারকৃত আসািমিদের আদালতে প্রেরণ করলে তারা দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান বলেন, আসামিরা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহসিন এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত সাহারা বিথীর আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দি প্রদান শেষে তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
এর আগে, গত ২৩ অক্টোবর দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সদর থানাধীন বাবুরাইল বৌবাজার এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন ওই গৃহবধূ। মামলার আসামিরা হলো নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানার গিয়াস উদ্দিনের ছেলে সোহেল রানা (৩৪), বৌবাজার নয়াপাড়া এলাকার মৃত কবির হোসেনের মেয়ে সেলিনা (৩৫), সিরাজুল হকের ছেলে মোহাম্মদ আলী (৫৫), মেহেদী (৩০) ও সৌরভ (৩০)। এর মধ্যে প্রধান আসামি সোহেল রানা, দ্বিতীয় আসামি সেলিনা ও তৃতীয় আসামি মোহাম্মদ আলীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মামলা ও গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে সদর মডেল থানার ওসি আনিচুর রহমান মোল্লা জানান, গত ২৩ অক্টোবর ভুক্তভোগী নারীকে টাকা ধার দেয়ার কথা বলে কৌশলে সেলিনার ভাড়া বাসায় নিয়ে যায় সোহেল রানা। তার সহযোগিতায় চারজন মিলে ওই নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। ওই সময় গৃহবধূর ১১ মাসের শিশুকে জিম্মি করে ধর্ষকরা। এ ঘটনায় মঙ্গলবার ওই নারীর স্বামী থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রধান আসামি সোহেল রানাসহ মোট তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী নারী ২ সন্তানের জননী। তার সাথে প্রধান আসামি সোহেল রানার পরিচয় ছিলো। গত ২৩ অক্টোবর ওই নারী সোহেল রানার কাছে ১ হাজার টাকা ধার চায়। সোহেল টাকা দিতে রাজি হয়। টাকা নিতে ওই নারীকে শহরের ডিআইটি মোড় এলাকায় আসতে বলে। ওই নারী তার ১১ মাসের শিশু সন্তানকে নিয়ে ডিআইটি মোড় এলাকায় আসার পর সোহেল তাকে বলে যে, তার সাথে এখন টাকা নেই। টাকা নেয়ার জন্য বাসায় যেতে হবে। পরে দুপুর ১২টার দিকে সোহেল ওই নারীকে নিয়ে শহরের বাবুরাইল বৌবাজার নয়াপাড়া এলাকার এক ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়। যেখানে দ্বিতীয় আসামি সেলিনা থাকেন। এসময় সেলিনা ভিকটিমের ১১ মাসের শিশু সন্তানকে জোর করে কেড়ে নেয় এবং প্রধান আসামি সোহেল ওই নারীকে ধর্ষণ করে।
ভুক্তভোগী নারীর বরাত দিয়ে এজাহারে উল্লেখ করা হয়, দ্বিতীয় আসামী সেলিনা অন্যান্য আসামি মোহাম্মদ আলী, মেহেদী ও সৌরভকে ফোন করে তার বাসায় নিয়ে আসে এবং পরবর্তীতে তারা সেলিনার সহায়তায় ওই নারীকে পালাক্রমে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও নির্যাতন করে। বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত টানা তিন ঘন্টা ওই নারীকে আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতনের পর তাকেসহ শিশু সন্তানকেও হত্যার হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে মুক্তি দেয় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক