নারায়ণগঞ্জের বন্দরে নিজ ঘরে দিপালী রাণী (৪২) নামে এক গৃহবধূকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় নিহতের স্বামী শ্যামা চন্দ্র দাস (৪৮) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
শুক্রবার সকালে বন্দর উপজেলার লেজারস এলাকায় ভাড়া বাড়ি থেকে দিপালী রানীর লাশ উদ্ধার করা হয়। তার পাশে শুয়ে থাকা স্বামী শ্যামা চন্দ্র দাসও জখম হয়েছেন। তার গলায় ও শরীরে ছুরিকাঘাতের ক্ষত রয়েছে। আহত স্বামী শ্যামল চন্দ্রের স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যাসহ তাকেও কে বা কারা কুপিয়ে জখম করেছে তার বর্ণনা দিয়েছেন স্বজনদের কাছে।
এদিকে ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন বাড়িওয়ালার বোন ও বাড়ির কেয়ারটেকার ফরিদা বেগম এবং তার ছেলে সিয়াম।
আহত শ্যামা চন্দ্র দাসের বরাত দিয়ে নিহতের মেয়ে মলি দাস জানান, বৃহস্পতিবার রাতে পাশের বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছিল। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি ও তার ছোট বোন অথৈ বিয়ে বাড়িতে যায়। সে কারণে ঘরের বাইরে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। রাত প্রায় সাড়ে ১২টার দিকে বাড়িতে ফিরে ঘরের লাইট না জ্বালিয়ে দু'বোন খাটে ঘুমিয়ে পড়ে। আর বাবা-মা প্রতিদিনের মত নিচে বিছানা বিছিয়ে শুয়েছিল। শুক্রবার সকাল আট টায় ঘুম ভাঙলে উঠে দেখেন মায়ের রক্তমাখা নিথর দেহ পড়ে রয়েছে। তার শরীরে অনেকগুলো কোপের ক্ষত রয়েছে। এর পাশেই বাবা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল। কাছে গিয়ে দেখতে পায় বাবার শ্যামলের নিঃশ্বাস চলছে। এ সময় স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
হত্যার সাথে বাড়ির কেয়ারটেকার জড়িত রয়েছে অভিযোগ করে তিনি জানান, এই বাড়ির বাড়িওলার বোন ফরিদা বেগম কেয়ারটেকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। তার সাথে প্রায় সময় মায়ের ঝগড়া-ঝাটি হত। কিছুদিন আগেও রান্না করা নিয়ে তার সাথে ঝগড়া হয়। এছাড়া ঘর ভাড়ার টাকা নিয়েও ঝগড়া হয়েছে। তবে তাদের সব ভাড়া আমরা ইতিমধ্যে পরিশোধ করেছি। এই ঝগড়ার রেশ ধরে ফরিদা বেগম ও তার স্বামী মিলে আমার বাবা-মাকে কুপিয়েছে। মা বাড়িতে মারা গেছেন। আর বাবা হাসপাতালে আহত অবস্থায় কিভাবে মাকে কুপিয়ে হত্যা ও বাবাকে কুপিয়ে জখম করেছে তার ঘটনা আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন। আমরা আমার মায়ের খুনীদের বিচার চাই।
স্থানীয়রা জানায়, নিহত দিপালী রাণী বন্দর লেজারস এলাকার কাউসার মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া ও শ্যামা চন্দ্র দাসের স্ত্রী। তিনি গৃহকর্মী হিসাবে কাজ করতেন। তার স্বামী আহত শ্যামা চন্দ্র দাস পেশায় একজন কর্মকার। তাদের সংসারে চার মেয়ে। তাদের মধ্যে বড় দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। আর ছোট দুই মেয়ে তাদের সঙ্গে এক ঘরে বসবাস করে।
এ বিষয়ে বন্দর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আবু বকর সিদ্দিক জানান, নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। গুরুত্বর আহত স্বামীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। নিহতের মেয়ের অভিযোগে ইতোমধ্যে ফরিদা ও তার ছেলেকে আটক করা হয়েছে। ফরিদার পলাতক স্বামী ফরিদকে আটক করতে পুলিশ কাজ করছে। তদন্তের পর ঘটনার বিস্তারিত জানানো যাবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল