রাজধানীর খিলগাঁও থানায় ১১ বছর বয়সী এক মেয়ে শিশুর বিরুদ্ধে চুরির মামলা নেওয়ায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দাউদ হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছেন আদালত। একইসাথে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট থানার উপপরিদর্শক মো. সাখাওয়াত হোসেনকেও শোকজ করা হয়েছে।
শনিবার (৩১ মে) সংশ্লিষ্ট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. সাজ্জাদ হোসেন সবুজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বুধবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক মো. গোলাম কবির এ শোকজ দেন। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে খিলগাঁও থানার ওসি ও সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দাখিল করার জন্য নোটিশে বলা হয়েছে।
জানা যায়, গত ২৭ মে খিলগাঁও থানাধীন গোড়ান মাজার গলিতে বাপ্পি পরিবহন নামক গ্যারেজে একটি মোবাইল চুরির ঘটনায় একটি মামলা করা হয়। গ্যারেজের কর্মচারী শুকুর আলী (২৪) বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন- খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা মোহনা (১৫), শাহানা (২৩), নিলুফা (২২) ও রুমা (১১)। তাদের সবার স্থায়ী ঠিকানা হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানার বোল্লা গ্রামে। এদের মধ্যে ১১ বছর বয়সী শিশু রুমাকে আসামি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করায় থানার ওসি ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেয়া হয়েছে।
কারণ দর্শানোর নোটিশে উল্লেখ করা হয়, কারাগারে আটক রাখার আবেদনে শিশু "রুমা"র বয়স ১২ উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে এজাহারে তার বয়স ১১ বছর বলা হয়েছে। ১৮৬০ সালের দন্ডবিধি আইনের ৮৩ ধারা অনুযায়ী, ৯ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুর দ্বারা সংঘটিত অপরাধ অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না, যদি সে তার কার্যক্রমের প্রকৃতি ও পরিণতি বুঝবার মতো পরিপক্বতা অর্জন না করে। রুমা নামক শিশুর বয়স এজাহারে ১১ বছর উল্লেখ রয়েছে। কেন তাকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হলো? কেন থানায় কর্মরত শিশু-বিষয়ক কর্মকর্তা দিয়ে প্রয়োজনীয় মূল্যায়ন ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি?
নোটিশে আরও বলা হয়, "আসামিদের কারাগারে আটক রাখার আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শিশুরা "পাবলিক কর্তৃক ধৃত" এবং "পাবলিক কর্তৃক মারধরের শিকার হয়েছে। অথচ, তাদের দেহে নীলাফোলা জখম থাকার পরও, তাদের চিকিৎসার কোনো রেকর্ড বা চিকিৎসা সনদ আদালতে দাখিল করা হয়নি এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা তাও পরিষ্কার নয়। এছাড়াও এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, মামলার প্রকৃতি বিবেচনায় কোন ধরণের উদ্ধার তালিকা বা জব্দ তালিকা প্রস্তুত করা হয়নি এবং তা আদালতে প্রেরিত নথির সঙ্গে দাখিল করা হয়নি।"
এ বিষয়ে শোকজপ্রাপ্ত খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দাউদ হোসেন বলেন, "শিশুটির বয়স এজাহারে ১১ বছর লেখা হলেও, তার বয়স মূলত ১২ বছর। ফরোয়ার্ডিংয়ে (আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন) শিশুর বয়স ১২ বছর লেখা হয়েছে। এই শিশু চুরি করেছে, তার সিসিটিভি ফুটেজ আছে৷ শিশু অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে দোষীপত্র দেয়া হয়।" শোকজের বিষয়ে তিনি বলেন, "আমরা শোকজের ব্যাখ্যা বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করবো।"
বিডি প্রতিদিন/হিমেল