শিরোনাম
৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০৮:১৯

নগরজুড়ে ভোটের জঞ্জাল

নির্বাচনের পোস্টার থেকে ২ হাজার ৪৭২ টন লেমিনেটেড প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

নগরজুড়ে ভোটের জঞ্জাল

ভোট শেষ হয়েছে শনিবার বিকালে। গতকাল পর্যন্ত পোস্টার-ব্যানার অপসারণ হয়নি অনেক এলাকায়। গিনরোড থেকে তোলা ছবি : জয়ীতা রায়

ভোটে হেরে গেছেন বলে কারও মন খারাপ। আর ভোটে জিতে খুশিতে উড়ছেন কেউ কেউ। তাই অলি-গলি, রাস্তায়, দেয়ালে যে পোস্টার লাগিয়েছেন তা অপসারণে মন নেই অনেকের। ফলে নগরজুড়ে ভোটের জঞ্জাল চারদিকে। ভোট শেষ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পরও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার, ব্যানারের বর্জ্য ঝুলছে। কোথাও কোথাও ঝুলে থাকা পোস্টারের দড়ি কেটে দিয়েই দায় সারা হয়েছে। পোস্টার আছে পোস্টারের জায়গায়ই। শনিবার বিকালে দুই সিটি নির্বাচন শেষ হলেও গতকাল পর্যন্ত রাজধানীজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে লেমিনেটেড পোস্টার। প্লাস্টিকে মোড়ানো এসব পোস্টার ড্রেনে পড়ে তৈরি হচ্ছে জলজট। প্লাস্টিকের কয়েক টন পোস্টার পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্য হুমকির বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) এক গবেষণায় জানা যায়, নির্বাচনে প্রার্থীরা প্রচারের উদ্দেশে আনুমানিক ৩০৪ মিলিয়ন প্লাস্টিক লেমিনেটেড পোস্টার ছেপেছেন। এছাড়া প্রচারে ব্যবহৃত স্টিকার, সাধারণ কার্ড, স্বেচ্ছাসেবকের পরিচয়পত্র তৈরিতেও লেমিনেটেড প্লাস্টিকের ব্যবহার হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারের শুরুর ১২ দিনে ২ হাজার ৪৭২ টন লেমিনেটেড প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে। এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, প্রাথমিক ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া এ বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য প্লাস্টিক দূষণের অংশীদার হবে। এসব একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এতে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। এছাড়া বায়ু ও পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার কারণ হয়ে দাঁড়াবে এসব প্লাস্টিক বর্জ্য। শহরজুড়ে টানানো লেমিনেটেড পোস্টার নিয়ে গবেষণা করেছে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। এ গবেষণায় নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার। তিনি জানান, ৩০ জন প্রার্থীর পোস্টার ধরে তারা গবেষণা করেছেন। এতে দেখা যায়, প্রতিটি পোস্টারে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের গড় ওজন ১৩ দশমিক ৪৭ গ্রাম। কোনো কোনোটিতে সর্বোচ্চ ১৮ দশমিক ৫ গ্রাম প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ১০০ টনের বেশি প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয়েছে ঢাকার দুই সিটির ভোটের পোস্টারে। নির্বাচনের আগে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা দূষণমুক্ত পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু নির্বাচন পার হলেও মাত্র হাতে গোনা দুই-একজন পোস্টার অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছেন। পোস্টার অপসারণে কাজ শুরু করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। ঢাকা উত্তর সিটির নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম জানান, তারা সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি নিজ উদ্যোগে পোস্টার অপসারণ শুরু করেছেন। এসব পোস্টার থেকে প্লাস্টিক ছাড়িয়ে রিসাইক্লিং করা হবে। এজন্য একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি। তাই পোস্টার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে না ফেলে এক জায়গায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

গত রবিবার গ্রিন রোডের নিজ কার্যালয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আমি সব নির্বাচিত কাউন্সিলর ও নেতা-কর্মীকে অনুরোধ করব ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন সোমবারের মধ্যে যেন অপসারণ করা হয়। আমরা চাই পরিচ্ছন্ন নগর। যে গুরুদায়িত্ব পেয়েছি, সেই দায়িত্ব পালনে আমরা সচেষ্ট থাকব। এই প্লাস্টিক মোড়ানো পোস্টার কীভাবে ধ্বংস করা হবে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের দেশে প্লাস্টিক সামগ্রী ধ্বংসের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা দায়িত্বভার নেওয়ার পর এই প্লাস্টিক সামগ্রী যাতে দৈনিক ধ্বংস করা যায় সেরকম আধুনিক প্রযুক্তি আনার উদ্যোগ নেব। এদিকে নির্বাচন শেষ হতেই পোস্টার অপসারণে মাঠে নেমেছে দুই সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা টিম। কিন্তু এই বিপুল পোস্টার অপসারণ করতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মীরা। বাড্ডা এলাকায় পোস্টার অপসারণ করছিলেন সিটি করপোরেশনের কর্মী হোসেন আলী। তিনি বলেন, এত পোস্টার লাগিয়েছে যে, তিন ঘণ্টায় এক কিলোমিটার রাস্তা পরিষ্কার করতে পারছি না। মূল সড়ক পরিষ্কার করে গলিতে ঢুকে দেখি সেখানকার অবস্থা আরও খারাপ। পোস্টার ছিঁড়লেও আবার দেখা যাচ্ছে দড়ি ঝুলছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপ-প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা টিম ভাগ করে সব এলাকায় পোস্টার অপসারণের কাজ করছি। অনেক পোস্টার অপসারণ করা হয়েছে, তবুও বেশকিছু জায়গায় রয়ে গেছে। তিন দিনের মধ্যে এসব পোস্টার নামানোর টার্গেট নিয়েছি। এর আগে ২২ জানুয়ারি বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় নতুন করে লেমিনেটেড পোস্টার উৎপাদন ও প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশ দেন। রুলে সারা দেশে নির্বাচন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে লেমিনেটেড পোস্টার ছাপানো এবং প্রদর্শন বন্ধে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট। নির্বাচনের পর এসব পোস্টার অপসারণ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর