মঙ্গলবার, ২৪ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
সিনহা হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু

মামলায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগ রাষ্ট্র ও বাদীপক্ষের

কক্সবাজার প্রতিনিধি

মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবীরা বিচারকাজ বিলম্বিত, ক্ষেত্রবিশেষ মামলায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগ করেছেন। গতকাল বিকালে সিনহা হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের প্রথম দিন সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর এ অভিযোগ করেন। তিনি জানান, মামলার শুরু থেকেই আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতে দরখাস্ত দিয়ে মামলা বিলম্বিত করার চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। গতকাল সাক্ষ্য গ্রহণের প্রথম দিন আসামিপক্ষের আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত ১১টি দরখাস্ত দিয়ে মামলা স্থগিত চেয়ে আবেদন করেন। আদালত এসব দরখাস্ত গ্রহণ করেনি। একই অভিযোগ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম। তিনি জানান, আসামিপক্ষের আইনজীবী নানা অজুহাতে মামলা বিলম্বিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এদিকে মামলার বাদী মেজর (অব.) সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া সাক্ষ্য গ্রহণের প্রথম দিন আদালতে মামলার সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তির প্রার্থনা করেছেন। শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসের সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে আদালতে সিনহা হত্যা মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। প্রথম দিন সকাল সোয়া ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বাদী আদালতে জবানবন্দি দেন এবং ১৩ আসামির আইনজীবী তাকে জেরা করেন। মঙ্গলবার মূল আসামি বরখাস্ত ওসি প্রদীপ ও বরখাস্ত পরিদর্শক লিয়াকত আলীর আইনজীবী তাকে জেরা করবেন। বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণের পর ২৪ ও ২৫ আগস্ট অন্য সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ চলবে।

বিকাল ৫টায় আদালতের কার্যক্রম মুলতবি ঘোষণা করা হয়। এর আগে সকাল ১০টায় এ মামলার সব আসামিকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। মামলায় মোট ৮৩ সাক্ষীর মধ্যে বাদীসহ ১ থেকে ১৫ নম্বর সাক্ষী এ তিন দিন সাক্ষ্য দেবেন। এ মামলায় অভিযুক্ত ১৫ আসামির সবাই কক্সবাজার জেলা কারাগারে রয়েছেন।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, ২৭ জুন জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল আসামিদের উপস্থিতিতে মামলাটির চার্জ গঠন করে ২৬, ২৭ ও ২৮ জুলাই একটানা তিন দিন বাদীসহ ১০ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করে আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু করোনার কারণে লকডাউনে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। সরকার ১১ আগস্ট লকডাউন তুলে নিলে আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ায় জেলা ও দায়রা জজ নতুন করে সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেন। যথাসময়ে বাদীসহ সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করবে আদালত।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপসহ নয়জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় র‌্যাব-১৫। চার মাসের বেশি সময় তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত ও ৮৩ জনকে সাক্ষী করে আলোচিত মামলাটির চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব-১৫-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম। চার্জশিটভুক্ত ১৫ আসামি কারাগারে রয়েছেন। এর মধ্যে বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাস, কনস্টেবল সাগর দেব ও রুবেল শর্মা ছাড়া ১২ আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

মামলায় অভিযুক্ত ও কারাগারে আটক ১৫ আসামি হলেন- বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক (বরখাস্ত) লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাস, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এএসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাগর দেব, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর