বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

বরিশাল বিএনপিতে অন্তঃকলহ

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশাল বিএনপিতে অন্তঃকলহ

বরিশাল মহানগর বিএনপিতে অন্তঃকলহ শুরু হয়েছে। নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটি গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক টিমের সঙ্গে মতবিরোধে জড়িয়ে পড়ছেন মহানগর বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এ কারণে মহানগর বিএনপির ৩ নম্বর সাংগঠনিক টিমপ্রধানসহ পাঁচ সদস্যের সবাই চিঠি দিয়ে একটি ওয়ার্ডের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। নগরের ৩০ ওয়ার্ড কমিটি গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাত সাংগঠনিক টিমপ্রধানের দাবি, ওয়ার্ড কমিটি গঠনে আহ্বায়ক, ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবকে হস্তক্ষেপ করতে বারণ করেছেন দলীয় প্রধান। অথচ সব ওয়ার্ডে কর্মিসভায় আগে থেকে নিজস্ব লোক ঠিক করে রাখেন আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব। এমনকি সভায় উপস্থিত থেকে তারা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালান বলেও দাবি তাদের। এসব যারা বলেন তারা দলের ভালো চান কি না সে প্রশ্ন তুলেছেন মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব। ৩ নভেম্বর মনিরুজ্জামান ফারুককে আহ্বায়ক, আলী হায়দার বাবুলকে যুগ্ম আহ্বায়ক ও মীর জাহিদুল কবিরকে সদস্যসচিব করে মহানগর বিএনপির সংক্ষিপ্ত কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। ২২ জুনয়ারি ৪২ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন পায়। মহানগরে দলের কর্মতৎপরতা বাড়াতে ৫ জুন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এক জুমসভায় ৩০ ওয়ার্ডে কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সাতটি সাংগঠনিক টিম গঠনের নির্দেশ দেন। মহানগরের আহ্বায়ক, ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব ছাড়া অন্য যুগ্ম আহ্বায়কসহ সদস্যদের নিয়ে গঠন করা হয় ওই টিম। ওয়ার্ড কমিটি গঠনে তাদের কোনোরূপ হস্তক্ষেপের ব্যাপারে মৌখিকভাবে সতর্ক করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মীর জাহিদুল কবির বলেন, ‘এ পর্যন্ত ৩০ ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টিতে কর্মিসভা হয়েছে। এরপর সব ওয়ার্ড থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তথ্য ফরম জমা নেওয়া হবে। ফরমগুলো যাচাই-বাছাই করে যারা বিগত দিনে আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন তাদের নেতৃত্বে ওয়ার্ড কমিটি গঠিত হবে।’ একজন যুগ্ম আহ্বায়ক ও টিম লিডার জানান, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক টিম ওই ওয়ার্ডে কমিটি গঠন নিয়ে মহানগর নেতাদের সঙ্গে মতবিরোধে জড়িয়ে পড়েছে। ওই ওয়ার্ডের বিএনপি নেতারা জানান, মহানগর বিএনপির ১ নম্বর সদস্য চাইছেন তার নিজের নির্বাচনী ওয়ার্ডে সাঈদ তালুকদার নামে একজনকে সভাপতি করতে। যিনি বিগত কাউন্সিলর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন এবং মঞ্চে উঠে বক্তব্য দিয়েছেন। অন্যদিকে আরেকটি পক্ষ চাইছে যারা বিগত দিনে মাঠে ছিলেন তাদের মধ্য থেকে কাউকে ওয়ার্ড সভাপতি করতে। এ নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে ১৮ জুলাই মহানগর কমিটির নেতাদের কাছে চিঠি দিয়ে ২২ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান ৩ নম্বর সাংগঠনিক টিমের লিটার হাবিবুর রহমান টিপুসহ টিমের অন্য চার সদস্য। ওই টিম থেকে সরে যাওয়া হাবিবুর রহমান টিপু, সেলিনা বেগম ও জসিম উদ্দিন জানান, ২২ নম্বর ওয়ার্ড কমিটি গঠনে জটিলতা এড়াতে তারা ওই ওয়ার্ডের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির একমাত্র নারী সদস্য আফরোজা খানম নাসরিন বলেন, ওই ওয়ার্ডের সাবেক সহসভাপতি সোমবার দুপুরে মারা যান। সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ অবস্থায় হাবিবুর রহমান টিপুর সাংগঠনিক টিম সরে যাওয়ার পর ওই ওয়ার্ডে তড়িঘড়ি একজন সদস্যকে প্রধান করে সোমবার রাতে দলীয় কার্যালয়ে কর্মিসভা করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব সব ওয়ার্ডে কর্মিসভায় আগে থেকে নিজস্ব লোক ঠিক করে রাখেন। তারা ওইসব সভায় উপস্থিত থেকে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন। ফলে তাদের মতের বাইরে কিছু করা যায় না। মহানগর বিএনপির আরেকজন যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, দলীয় প্রধানের নির্দেশ হচ্ছে সাংগঠনিক টিম ওয়ার্ড কমিটি চূড়ান্ত করে মহানগর নেতাদের কাছে দেবেন। মহানগরের আহ্বায়ক, ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব ওয়ার্ড কমিটি অনুমোদন দেবেন। কিন্তু তারা এসব নিয়ম মানছেন না। তারা নিজেরা ওয়ার্ডের কর্মিসভায় প্রধান অতিথি-প্রধান বক্তা হয়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মীর জাহিদুল কবির। তিনি বলেন, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে যা হয়েছে তা সামান্য বিষয়। এগুলো নিয়ে যারা কথা বলছেন তারা দলের ভালো চান কি না সে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর