সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফরমে গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে টিটো রহমান এবং নাজমুস সাকিব নামে দুই প্রবাসীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গতকাল রংপুর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন রংপুর মহানগর আওয়াামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- ইব্রাহিম আলী ও আনিস মিয়া। একই সঙ্গে মামলায় ৮ থেকে ১০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলাটি আমলে নিয়ে রংপুরের সিআইডি পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক ড. আবদুল মজিদ। মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন শাম্মি আক্তার, আজগার আলী, আমিনুল ইসলাম, আহসান হাবীব জুয়েলসহ কয়েকজন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন রুহুল আমিন তালুকদার। একই আদালতে একই অভিযোগে আরেকটি মামলা দায়েরের আবেদন করেছেন রংপুর মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আসিফ হোসেন। আবেদনটি সোমবার শুনানির জন্য রেখেছেন আদালত। অভিযুক্ত টিটো রহমান রাজধানীর জিগাতলা এলাকার মৃত ডা. মতিনুর রহমানের ছেলে। বর্তমানে কানাডা প্রবাসী। নাগরিক টিভি নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিজের পরিচয় দেন তিনি। নাজমুস সাকিব সবুজবাগ এলাকার জলিলুর আজমের ছেলে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নাজমুস সাকিব নিজের পরিচয় দেন নাগরিক টিভির বার্তা সম্পাদক হিসেবে। মামলায় বলা হয়, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং অনলাইন প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে আসামিরা বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে গুজব, আপত্তিকর, কুরুচিপূর্ণ, মিথ্যা, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর ও রাষ্ট্রবিরোধী তথ্য বারবার প্রচার করছে। শুধু প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবার নয়; তাঁর আত্মীয়স্বজন, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জ্যেষ্ঠ নেতা এবং দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের বিরুদ্ধেও বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে আসামিরা। এমনকি দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের নিয়েও প্রতিনিয়ত গুজব ছড়াচ্ছে তারা। জানা গেছে, কানাডা থেকে প্রচারিত নাগরিক টিভি নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেন মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে টিটো রহমান। নাজমুস সাকিব নিজের পরিচয় দেন বার্তা সম্পাদক হিসেবে। ধর্ষণ ও প্রতারণাসহ বিভিন্ন অপরাধে মামলা দায়ের হওয়ার পর দেশ ছেড়ে কানাডায় পালিয়ে যান তারা। সেখানে গিয়ে জড়িয়ে পড়েন দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে। আনলাইন প্ল্যাটফরমে রাষ্ট্র, বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে গুজব ছড়ানো শুরু করেন তারা। অভিযোগ রয়েছে, টিটো রহমানের পুরো পরিবারই স্বাধীনতাবিরোধী। তার দাদা একাত্তরের ঘাতক ছিলেন, বাবা ছিলেন রাজাকার। আর মোস্তাফিজুর রহমান ছোটবেলা থেকেই বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ওঠাবসা করতেন। তবে রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে মোস্তাফিজুর রহমান দিনাজপুরে একজন মাদকসেবী এবং নারী নিপীড়ক হিসেবে পরিচিত ছিল। ইভ টিজিংয়ের জন্য একাধিকার মোস্তাফিজুর রহমান শাস্তি পেয়েছিল। সর্বশেষ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে পড়ার সময় এক শিক্ষার্থী তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন। অন্যদিকে, রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় ২০১১ সালে নাজমুস সাকিবের বিরুদ্ধে পাঁচ বছর বয়সী শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় মামলার পরই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান নাজমুস সাকিব। মামলার এজাহারে বলা হয়, রাজধানীর বাসাবোর সবুজবাগ এলাকার ২৮ নম্বর মায়াকাননের পেছনে তিনটি বাড়ির পর একটি টিনশেড ঘরে পরিবারের সঙ্গে থাকত শিশুটি। পিতা সিএনজি অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছিলেন। ঘটনার দিন ফুটফুটে ছোট্ট শিশুটিকে চকোলেটেরে লোভ দেখিয়ে ২৮ নম্বর মায়াকাননে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান মাদকাসক্ত নাজমুস সাকিব। এরপর ছাদে নিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হলে শিশুটিকে নিচতলার গ্যারেজে রেখে পালিয়ে যান নাজমুস সাকিব। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রুহুল আমিন তালুকদার বলেন, দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য অনলাইন নাগরিক টিভি নামের ইউটিউব প্রধানমন্ত্রীসহ তাঁর পরিবার, ওবায়দুল কাদের, আইনমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কটূক্তি করায় চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে রংপুর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে। মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করার জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এই মামলার বাদী রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল জানান, প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারকে কটূক্তি করাসহ দেশের ভাবমূর্তি নষ্টের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করায় চারজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি চাই দ্রুত তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক। তিনি আরও বলেন, আদালতকে সম্মান জানাই, আদালত মামলাটি আমলে নিয়েছেন। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে টকশো করে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারাকারী এসব অনুমোদনহীন অনলাইন চ্যানেল বন্ধের দাবি জানান তিনি।