২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেকের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির প্রভাবশালী নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জু। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ৬৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয় পান খালেক। এবার খুলনায় বিএনপিবিহীন নির্বাচনী মাঠে আপাত দৃষ্টিতে আওয়ামী লীগের জয় দেখছেন অনেকে। আবার নানা কারণে সমীকরণ পাল্টেও যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সে ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের যে কেউ শেষ হাসি হাসতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকে।
জানা যায়, খুলনা সিটি করপোরেশনে ভোটপ্রাপ্তিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রায় সমান গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ২০১৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী তালুকদার খালেককে ৬১ হাজার ভোটে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপির মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। তবে ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক জিতেছেন বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে হারিয়ে। ভোটের দিন অনিয়মের অভিযোগে ভোট বর্জন করেছিলেন অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা।
এবারের চিত্র ভিন্ন। গাজীপুর সিটি নির্বাচনের পর খুলনা সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু-সুন্দর হবে বলে প্রত্যাশা রয়েছে প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে। ফলে প্রখর রোদ উপেক্ষা করে প্রতিশ্রুতির ঝাঁপি নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন প্রার্থীরা।
জানা যায়, বিএনপিবিহীন সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগেরই জয়ের একতরফা সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে। পরিচ্ছন্ন-সুন্দর স্বাস্থ্যকর উন্নত স্মার্ট খুলনা নগরী গড়ে তুলতে ১২ জুন নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করার আহ্বান জানাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক। প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের ভোটপ্রাপ্তি নিয়ে যত না চিন্তিত তার চেয়েও ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে ভাবনা বেশি খালেকের। এরই মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। জলাবদ্ধতা নিরসন, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মাদকমুক্ত নগরী গড়ে তোলাসহ সেবামূলক খাত শক্তিশালী করতে ৪০ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন তিনি। তালুকদার খালেক বলেন, খুলনাবাসীর কাছে অনুরোধ- চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। এই কাজ সম্পন্ন করার জন্য নৌকা প্রতীকে ভোট ও আমাকে পুনরায় দায়িত্ব প্রদানের আহ্বান জানাই। ভোটারদের কাছে তিনি ভোট ও দোয়া কামনা করেন।
এদিকে সংসদে বিরোধী দল হিসেবে ভূমিকা রাখলেও খুলনায় নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে জাতীয় পার্টি। দলের একাধিক সিনিয়র নেতা এখনো প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় মাঠে নামেননি। দলের কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার সাংগঠনিক পরিস্থিতি দেখতে খুলনা সফর করেন। জাপা প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু ভোটারদের আকৃষ্ট করতে প্রচারণায় ঘাম ঝরাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়রকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, সিটিতে বসবাসরত সাধারণ নাগরিকদের সেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। নির্বাচনের সময় ইশতেহারের নামে বড় একটি ফর্দ ধরিয়ে দেন। তাতে থাকে ৪০-৫০টা নাগরিক সেবার প্রতিশ্রুতি। অথচ নির্বাচনের পর দুইটা কাজও শেষ হয় না।
মধু বলেন, আমি নির্বাচিত হলে সুপেয় পানি, মশকনিধন ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণে কাজ করব। এর আগে ২০১৩ সালের নির্বাচনে দোয়াত-কলম প্রতীকে মেয়র নির্বাচনে অংশ নিয়ে মধু তেমন ভোট পাননি। তবে এবার দলীয় প্রতীক লাঙ্গল থাকায় আশাবাদী মধু।
অন্যদিকে এবার নির্বাচনে সাংগঠনিকভাবে অনেকটা গুছিয়ে মাঠে নেমেছেন ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা। আগেভাগে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। হাতপাখা প্রতীকের পোস্টার ঝুলছে রাস্তার মোড়ে মোড়ে। গত নির্বাচনে দলে মেয়র প্রার্থী মোজ্জাম্মিল হক ১৪ হাজার ৩৬৩ ভোট পেলেও এবার নতুন প্রার্থী মাওলানা আবদুল আউয়াল জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় লক্ষাধিক ভোট পাওয়ার আশা করছেন।
তিনি বলেন, খুলনা নগরীতে জলাবদ্ধতাসহ নানা ভোগান্তিতে রয়েছে জনগণ। বর্তমান অবস্থা থেকে তারা মুক্তি পেতে চায়। এ জন্য তারা ক্লিন ইমেজ হিসেবে আলেম ওলামাদের ওপর আস্থাশীলতার কথা জানিয়েছেন। ভোট নিরপেক্ষ হলে আমরাই বিজয়ী হব, ইনশা আল্লাহ।
গত নির্বাচনে জাতীয় পার্টির হয়ে ১০৭২ ভোট পাওয়া এবারের স্বতন্ত প্রার্থী শফিকুর রহমান মুশফিক হিসাব কষছেন ভিন্ন আঙ্গিকে। তিনি বলেন, বিএনপি সমর্থকদের বিশাল ভোট ও আওয়ামী বিরোধী ভোটারদের পাশে পেতে তিনি কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘যেভাবেই হোক গত নির্বাচনে তিনি (খালেক) মেয়র হয়েছেন। নাগরিক সেবায় যে কার্যক্রম করা উচিত তা হয়নি। ১৪০০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে, যার সুফল খুলনাবাসী পায়নি। এই যে রাস্তাঘাটে খোঁড়াখুঁড়ি তা অপরিকল্পিত কাজ। ২৫ হাজার বাড়িঘর রাস্তা থেকে নিচু হয়ে গেছে। এখানে ভোটের একটা ভিন্ন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। মানুষ চায় মেয়রের কাছাকাছি কথা বলতে- বিগত দিনে সেই সুযোগ হয়নি। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর রোষানল তৈরি হয়েছে, যদি ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকে তাহলে মানুষ কতটা যন্ত্রণায় আছে ভোটের বাক্সেই তার প্রমাণ মিলবে।