রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজায় বাধা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা, গ্রেফতার নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ বলছে, পূর্ব অনুমতি না নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করায় বাধা দেওয়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হয়ে ককটেল বিস্ফোরণসহ ব্যাপক ভাঙচুর চালায় জামায়াত নেতা-কর্মীরা। পরে ঘটনাস্থল থেকে ৪৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। জামায়াতে ইসলামীর দাবি, তাদের মিছিলে পুলিশ অতর্কিত রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। এদিকে, নাশকতার অভিযোগে গ্রেফতার ৪৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতদের আসামি করে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেছে পুলিশ। জানা গেছে, গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের নেতৃত্বে যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। এ সময় মিছিলে ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আবদুল মান্নান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ। ঢাকা মহানগরী পূর্বের সভাপতি তাকরিম হাসানসহ জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি শুরুর পর পুলিশ তাদের কাছে জানতে চায়, পূর্ব অনুমতি না নিয়ে এ ধরনের কর্মসূচি কেন পালন করা হচ্ছে। এ সময় জামায়াতের নেতা-কর্মীরা পুলিশের ওপর চড়াও হলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। পরে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে ৪৬ জনকে গ্রেফতার করে। এ বিষয়ে ডিএমপির ডেমরা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মধুসূদন দাস বলেন, নাশকতার উদ্দেশ্যে কোনো পূর্বানুমতি ছাড়াই জামায়াতে ইসলামীর শত শত নেতা-কর্মী মিছিল বের করে। এ সময় তাদের বাধা দিতে গেলে পুলিশের ওপর চড়াও হয়ে গাড়ি ভাঙচুর করে। ইটপাটকেল ছুড়তে ছুড়তে একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে ৪৬ জনকে গ্রেফতার করে। এ বিষয়ে ওই ৪৬ জনের নাম উল্লেখ করে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা হয়েছে। এদিকে, গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। বিবৃতিতে বলা হয়, মিছিল শেষে সমাবেশে অতর্কিত হামলা, গুলিবর্ষণ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ সময় ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকা থেকে অসংখ্য নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ।
মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের আমিরসহ পাঁচ নেতা গ্রেফতার : মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, জেলা জামায়াতের আমির-সেক্রেটারিসহ পাঁচ নেতাকে গ্রেফতার করেছে মৌলভীবাজার মডেল থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে সদর উপজেলার শাহবন্দর এলাকায় একটি বাড়িতে ভার্চুয়াল আলোচনা সভা চলাকালীন তাদের আটক করা হয়।
আটকরা হলেন- মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের আমির ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহেদ আলী, সেক্রেটারি ইয়ামীর আলী, মৌলভীবাজার সদর উপজেলা জামায়াতের আমির ফখরুল ইসলাম, পৌর জামায়াতের সেক্রেটারি মুর্শেদ আহমদ চৌধুরী ও জেলা জামায়াতের নেতা শেখ শাহাবুদ্দিন। মৌলভীবাজার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ হারুনূর রশীদ চৌধুরী জানান, গোপন বৈঠকে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে তাদের আটক করা হয়েছে। এদিকে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জামায়াত নেতৃবৃন্দ জানান, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মৌলভীবাজার জেলা শাখা। অনুষ্ঠানটি অনলাইন প্লাটফরমে সব শ্রেণিপেশার মানুষের অংশগ্রহণে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার জনসম্মুখেই করা হয়েছিল। এখানে গোপন বৈঠক নয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানানো হয়।