গারোদের বিশ্বাস, ‘মিসি সালজং’ বা শস্যদেবতার ওপর নির্ভর করে শস্যের ভালো ফলন। নতুন ফল ও ফসল ভক্ষণের আগে শস্য দেবতাকে কৃতজ্ঞতা জানানো আদিবাসী গারো সম্প্রদায়ের শত বছরের রেওয়াজ। এই শস্যদেবতাকে কৃতজ্ঞতা জানাতে গতকাল শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার মরিয়মনগর সাধু জর্জের ধর্মপল্লীর গির্জা চত্বরে নানা উৎসবের আয়োজন কর হয়। উৎসবকে ঘিরে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশেষ প্রার্থনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন। ঐতিহ্যবাহী ওয়ানগালা ওই দেবতার কাছে নতুন ফসল ভোজনের অনুমতির জন্য নেচেগেয়ে উদযাপন করা হয়। উৎসবে পরিবারে ভালোবাসা, আনন্দ, বিশ্বের সব পরিবারের মঙ্গল কামনা করা হয় শস্যদেবতার কাছে। উৎসব ঘিরে কয়েকদিন ধরেই পাহাড়ের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা গেছে।
এ সম্প্রদায়ের লোকদের তথ্য মতে, গারোদের সবচেয়ে আনন্দের উৎসব ওয়ানগালা। গারো ভাষায় ‘ওয়ানা’ শব্দের অর্থ দেবদেবীর দানের দ্রব্যসামগ্রী আর ‘গালা’ অর্থ উৎসর্গ করা। শস্য ভোজনের জন্য দেবদেবীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও মনোবাসনার নানা নিবেদন থাকে এ উৎসবে। সাধারণত বর্ষার শেষে ও শীতের আগে, নতুন ফসল তোলার পর এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এই উৎসবের আগে নতুন খাদ্যশস্যের ভোজন একদম নিষেধ থাকে এ সম্প্রদায়ের জন্য। ওয়ানগালা উৎসব শেষ হলেই নবান্নের ফসলের তৈরি করা ভোজন প্রভুকে ধন্যবাদের সঙ্গে বৈধ হয়ে যায়। তাই অনেকেই একে নবান্ন বা ধন্যবাদের উৎসবও বলে থাকেন।
সকাল ৯টায় মরিয়মনগর সাধু জর্জের ধর্মপল্লীর গির্জা চত্বরে থক্কা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ওয়ানগালা অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। উৎসবে ক্রুশচত্বরে বাণী পাঠ (মান্দিতে), খামালকে খুথুব (ধন্যবাদ) ও থক্কা (কৃতজ্ঞতা) প্রদান, জনগণকে থক্কা দেওয়া, পবিত্র খ্রিস্টযাগ, দান সংগ্রহ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রার্থনা করা হয়। গারো সম্প্রদায়ের বিপুলসংখ্যক মানুষ দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে বিশেষ প্রার্থনায় অংশ নেয় বলে জানিয়েছেন আয়োজক কমিটির সোহাদ্য চিরান। তিনি বলেন, সুপ্রাচীনকাল থেকে গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য, ধর্ম, বিশ্বাস, সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্ম ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে তুলে ধরাই মূল লক্ষ্য। উৎসব ঘিরে ধর্মপল্লীর পাশে গারোদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও শিশুদের নানা রকমের খেলনা নিয়ে মেলা বসে। উৎসবে যিশু খ্রিস্টের কাছে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা পরিচালনা করেন ময়মনসিংহ ধর্ম প্রদেশের বিশপ পনেন পল কুবি।