১০ মাস আগে ভাড়া নিয়ে স্থানীয় বিএনপির একটি অফিস খুলেছিলেন মাহমুদপুর ইউনিয়নের তোতা মেম্বার। কিন্তু কোনো মাসের ভাড়া না পেয়ে বকেয়াসহ অফিসের ভাড়া চাওয়ায় হত্যা করা হয় দোকান মালিক জাহাঙ্গীর হোসেনকে। ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও আড়াইহাজার উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের সালমদী নয়াবাজার এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলের আশপাশের কোনো দোকানপাট এখনো খোলেনি। ঘটনা নিয়ে কেউ কথা বলতেও রাজি নন। কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা করলে ‘জানি না’, ‘দেখিনি’ বলে উত্তর দেন। তবে নিহত জাহাঙ্গীরের মেজো মেয়ে নিলুফা আক্তার বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে আমরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি।
বিএনপির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আমাদের কেউ সান্ত্বনা পর্যন্ত দিতে আসেনি। অথচ আমার বাবাও বিএনপির মিছিল-মিটিংয়ে যেত।’ ৩০ জুলাই বিএনপি কার্যালয়ের ভাড়া চাওয়ায় জাহাঙ্গীর হোসেনকে বিএনপি নেতা-কর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনায় জাহাঙ্গীরের স্ত্রী সেলিনা বেগম বাদী হয়ে আড়াইহাজর মামলা করেছেন। আসামি করা হয়েছে তোতা প্রধান ওরফে তোতা মেম্বার (৭০), বেণু প্রধান (৭৫), আলম প্রধান (৪৫), রাসেল প্রধান (৩৫), খোকন প্রধান (৪০), সাদ্দাম (৩৫), জাহাঙ্গীর প্রধান (৪০), হানিফা (৪৫) ও হাসেমকে (৪৫)। পুলিশ হাসেমকে গ্রেপ্তার করেছে। এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
নিহতের বড় ছেলে মো. রাসেল বলেন, ‘তারা ১০ মাস ধরে দোকান ভাড়া নিয়েছে। এখন পর্যন্ত এক টাকাও ভাড়া দেয়নি। তাই তাদের তিন মাস ধরে দোকান ছেড়ে দিতে বলে আসছিলাম। কিন্তু তোতা মেম্বার ভাড়াও দিচ্ছিল না আবার দোকানও ছাড়ছিল না। ঘটনার দিন (৩০ জুলাই) আমি আর বাবা দোকানে কাজ করাইতে ছিলাম। পরে বাবাকে দোকানে রেখে আমি কাজে চলে যাই। কিছুক্ষণ পর শুনি তোতা মিয়াসহ তার লোকজন বাবাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। আমি তাড়াতাড়ি হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার বাবা আর নেই। আমি বাবার সঙ্গে থাকলে তারা আমাকেও মেরে ফেলত। হাসপাতালে গিয়ে শুনেছি হাসপাতালেও তারা বাবার মৃতদেহের ওপর আঘাত করেছে।’
সেলিনা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীকে তারা মেরে ফেলেছে। ঘটনার সময় আমার ছেলে থাকলে তাকেও তারা মেরে ফেলত। তারা আমার স্বামীকে মেরে এখন ঘটনা অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা পরিবার নিয়ে হুমকির মধ্যে রয়েছি। তারা অনেক ক্ষমতাশালী। যে কোনো সময় আমাদের ওপর হামলা করতে পারে। আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই। হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, তাদের বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন মাহমুদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তোতা প্রধান, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক খোকন প্রধান, বিএনপির সদস্য রাসেল প্রধান, আলম মিয়া ও সাদ্দাম হোসেন।
নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (গ-সার্কেল) মেহেদী ইসলাম বলেন, ‘জাহাঙ্গীর হত্যার ঘটনায় তাঁর স্ত্রী সেলিনা বেগম বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। মামলায় নয়জনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাতনামা আট-দশ জনকে আসামি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে একজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। বাকিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। পরিবারের সদস্যদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা সব সময় তাদের পাশে আছি।’