রাজশাহীতে ২০২৪ সালে নারী ও শিশু সহিংসতার ঘটনা বেড়েছে। রাজশাহী ব্লাস্টের তথ্য অনুযায়ী গত বছর অন্তত ৪৫০ নারী ও শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছেন। নারী অধিকার কর্মীরা বলছেন, আর্থিক সংকট, প্রভাবশালীদের চাপ, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রতা এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
গত বছরের ১২ এপ্রিল রাজশাহী নগরীর বর্ণালী মোড় থেকে এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী তরুণীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হলেও, ভুক্তভোগী তরুণী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন এবং তার পরিবার এ ঘটনার তদন্ত ও বিচার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। তরুণীর মা জানান, ঘটনার পর থেকে মেয়েটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে চান না এবং তিনি মানসিক চাপে আছেন।
রাজশাহী ব্লাস্ট, আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং মহিলা আইনজীবী সমিতির তথ্যমতে, ২০২৪ সালে রাজশাহীতে ২৮ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, ৫টি সংঘবদ্ধ ধর্ষণ এবং ৭টি ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া সাতজন নারী নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন। যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ৫৪ জন এবং ৩২ জন প্রতিবাদ করতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন। পারিবারিক নির্যাতনের শিকার ৩০০ নারী, যাদের মধ্যে ২৪৫ জন যৌতুকের জন্য নির্যাতিত হয়েছেন। পারিবারিক বিরোধে ১৪ নারী খুন হয়েছেন এবং ১০ নারী আত্মহত্যা করেছেন।
রাজশাহী ব্লাস্টের সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট সামিনা বেগম বলেন, ‘আমরা নারী ও শিশুর সহিংসতা কমানোর জন্য কাজ করছি, কিন্তু প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উপায়ে অপরাধ ঘটছে এবং আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অপরাধীরা পার পাচ্ছে।’
জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির পরিচালক অ্যাডভোকেট দিলসেতারা চুনি বলেন, ‘বেকারত্ব, আর্থিক সংকট, প্রভাবশালীদের চাপ, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রতা এই সহিংসতার মূল কারণ।’
রাজশাহী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট শামসাদ বেগম মিতালী বলেন, ‘অপরাধের সংখ্যা কমানোর জন্য আদালতের মামলার জট কমিয়ে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র সাবিনা ইয়াসমিন জানান, এই পরিসংখ্যানের বাইরেও অনেক নারীর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি ঘটছে পারিবারিক নির্যাতন, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা আইনগত সহায়তা চান না। নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা থানায় দায়ের হলে পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত তদন্ত শেষ করে এবং আসামিদের গ্রেপ্তার করে।