নারী সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশকে বিতর্কিত, ইসলামি শরিয়ত ও সংবিধানবিরোধী উল্লেখ করে তা পর্যালোচনার জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে একটি রিট দায়ের হয়েছে। রিটে সংশ্লিষ্ট সুপারিশগুলোর বৈধতাও চ্যালেঞ্জ করা হয়। গতকাল হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিটটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রওশন আলী। এতে আইন মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ কমিশনের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়েছে। রিট আবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি প্রকাশিত ৩১৮ পৃষ্ঠার ‘উইমেন রিফর্ম কমিশন রিপোর্ট-২০২৫’-এর একাধিক অধ্যায়ে ইসলামি শরিয়তের বিধান, দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের অনুভূতি এবং সংবিধানের বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘন করে সুপারিশ করা হয়েছে।
আইনজীবী রওশন আলী বলেন, ‘উইমেন রিফর্ম কমিশন রিপোর্ট-২০২৫’-এর অধ্যায় ৩, ৪, ৬, ১০, ১১ এবং ১২-এ অন্তর্ভুক্ত সুপারিশগুলো ইসলামি শরিয়তের বিধানগুলোর পরিপন্থি, জনগণের ধর্মীয় অনুভূতির পরিপন্থি এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় এ বিষয়ে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন, কমিশনের প্রতিবেদনে এমন কিছু প্রস্তাব রয়েছে, যা সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে। তাই আমরা আদালতের কাছে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের মাধ্যমে রিপোর্টের সুপারিশগুলো পুনরায় পর্যালোচনার নির্দেশনা চেয়েছি। চলতি সপ্তাহেই বিচারপতি ফাতেমা নজিব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর বেঞ্চে রিটের ওপর শুনানি হতে পারে।
রিটে বলা হয়েছে, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের ১১তম অধ্যায়ে পুরুষ ও নারীর জন্য সমান উত্তরাধিকার দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, যা পবিত্র কোরআনের সুরা নিসা (৪:১১)-এর সরাসরি পরিপন্থি। এ ছাড়া বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে, যা শরিয়ত অনুমোদিত বিধান লঙ্ঘন করে এবং সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ীও ধর্মচর্চার অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে। আবার ‘মাই বডি, মাই চয়েস’ স্লোগানকে অন্ধভাবে সমর্থন দিয়ে শরিয়তের নৈতিকতা উপেক্ষা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। এ ছাড়া যৌনকর্মকে বৈধ পেশা হিসেবে স্বীকৃতির প্রস্তাব ইসলামি মূল্যবোধ ও সংবিধানের ২(ক) ও ২৬ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি বলে এবং লিঙ্গ পরিচয় ও ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু নিয়ে যে ভাষা প্রতিবেদনে ব্যবহার করা হয়েছে, তা শরিয়ত ও ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে দাবি করা হয়েছে রিট আবেদনে।