পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য বনভূমির এবং গাছপালার প্রয়োজন মোট ভূমির ২৫ শতাংশ। কিন্তু রংপুরে সরকারি বনভূমি রয়েছে ১ শতাংশেরও কম। অপরদিকে বেসরকারিপর্যায়ে মাত্র ১০ শতাংশ গাছপালা রয়েছে। নগরায়ণ এবং অবৈধ দখলদারদের অবাধে বৃক্ষনিধনের কারণে ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে রংপুরের বনভূমি। ফলে এই অঞ্চলের জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। গাছপালা কমে যাওয়ার কারণে দ্রুত এই অঞ্চল মরুকরণের দিকে যাচ্ছে। কমছে নদনদীর পানি। মানুষসহ প্রাণী জগতে পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব।
রংপুর বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রংপুরে গাছপালা রয়েছে ২৮১ দশমিক ৭২ বর্গ কিলোমিটার। যা ১১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। নীলফামারীতে ১১১ দশমিক ১২ বর্গকিলোমিটার। যা ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ। গাইবান্ধায় ৮ দশমিক ১১ শতাংশে গাছপালা রয়েছে ১৮১ দশমিক ২৭ বর্গ কিলোমিটার। এ ছাড়া কুড়িগ্রামের ২৩৯ দশমিক ১৭ বর্গকিলোমিটার। যা ১০ দশমিক ৩২ শতাংশ। লালমনিরহাটের ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে গাছপালা রয়েছে ১২১ দশমিক ৯৯ বর্গকিলোমিটার।
অপরদিকে সরকারি সামাজিক বন বিভাগের বনভূমি রয়েছে ৭ হাজার ২৪০ একর। যা এক শতাংশের কম। এর মধ্যে রংপুরে সংরক্ষিত বনভূমি রয়েছে ১ হাজার ৬৯০ একর, রক্ষিত বনভূমি ৪৯৩ একর, অর্পিত ১ হাজার ৭৬৬ একর, অর্জিত ২৭ দশমিক ৩০ একর ও হস্তান্তরিত হয়েছে দশমিক ৫২ একর। নীলফামারীতে সংরক্ষিত বন ভূমি নেই। রক্ষিত রয়েছে ৬৪৮ দশমিক ১৬ একর, অর্পিত ৫৬১ দশমিক ৫৩ একর ও অর্জিত বনভূমি নেই। হস্তান্তরিত বনভূমি রয়েছে ১ হাজার ৫২৮ একর এবং প্রস্তাবিত রয়েছে ৩২৩ একর। লালমনিরহাটে সংরক্ষিত বন ভূমি রয়েছে ৮২ দশমিক ৬২ একর। এই জেলায় অর্পিত, অর্জিত, রক্ষিত, হস্তান্তরিত এবং প্রস্তাবিত বনভূমি নেই। কুড়িগ্রাম জেলায় সংরক্ষিত বনভূমি রয়েছে ১২৮ দশমিক ৫৯ একর। এই জেলাও অর্পিত, অর্জিত, রক্ষিত, হস্তান্তরিত এবং প্রস্তাবিত বনভূমি নেই। সূত্রমতে একযুগ আগে বেসরকারি এবং সরকারি পর্যায়ে এই অঞ্চলের লাখ লাখ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। গত বছর ‘তিস্তা সেচ ক্যানেলের সংস্কারের জন্য খালের উভয় পাশে সামাজিক বনায়নের প্রায় ৪ লাখের গাছ কেটে ফেলা হয়। কেটে ফেলা গাছের বদলে নতুন গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হলেও এ পর্যন্ত কত গাছ লাগানো হয়েছে তা কেউ বলতে পারছে না। উন্নয়নের নামে গাছ কাটায় প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়ছে।
এদিকে সরকারি ১ হাজার ২০০ একর বনভূমি প্রায় দেড় হাজার অবৈধ দখলদারদের কাছে রয়েছে। অবৈধ দলখদারদের বেশির ভাগই স্থানীয় প্রভাবশালী। বন বিভাগ এসব জমি উদ্ধারে মামলা করলেও আইনের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সরকারের বনায়ন কর্মসূচি মাঠে মারা যেতে বসেছে। তবে বন বিভাগ বলছে বন উদ্ধার অভিযান চলমান রয়েছে।
রংপুর বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ, পীরগঞ্জ, নীলফামারীর ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী, লালমনিরহাটের হাতিবান্ধায় বন বিভাগের মালিকানায় বনভূমি রয়েছে ৭ হাজার ২৪০ দশমিক ৫ একর। এসব বনভূমির ১ হাজার ২৩০ দশমিক ১৯ একর জমি প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে দখল করে ভোগ করছেন। দখলদারের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। এসব জমি উদ্ধার করতে বন বিভাগের চলমান মামলা রয়েছে শতাধিক। এ ছাড়াও বনবিভাগের দাবি প্রায় ২০০ একর বনভূমি অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাংলা একাডেমির সহপরিচালক এবং বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবিদ করিম মুন্না জানান, রংপুর বিভাগ ঘোষণা হওয়ার পর থেকে অনেকেই শুরুতে কিছু কম মূল্যে জমি কিনেছেন। দেখা গেছে, যেসব জায়গায় মাত্র ৩-৪টি বাড়ি হয়েছে। আশপাশের সামনে পেছনের জমি বছরের পর বছর পড়ে আছে। জনসংখ্যা বাড়লেও বড় গাছপালা তথা বনায়ন মোটেও হয়নি। ফলে অক্সিজেনের চাহিদা মেটাতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই ক্রমে ক্রমে। তার মতে বন অর্থাৎ গাছ ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। বায়ুমন্ডলীয় কার্বন ডাই-অক্সাইড জমা করে জলবায়ু পরিবর্তনকে প্রশমিত করে বন। জীববৈচিত্র্য ঠিক রাখতে বনের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই বৃক্ষনিধন বন্ধ এবং অবৈধ দখলে থাকা বন ভূমি উদ্ধার জরুরি হয়ে পড়েছে। রংপুর বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসার মোশাররফ হোসেন বলেন, অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে বনভূমি উদ্ধারে অভিযান চলমান রয়েছে। ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকার কথা থাকলেও রংপুরে সরকারি বন রয়েছে ১ শতাংশের নিচে এবং বেসরকারি পর্যায়ে বৃক্ষ আচ্ছাদিত বনভূমি রয়েছে ১১ শতাংশ।