‘জুলাই গণ অভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, দেশের গণতন্ত্র চর্চায় গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। গণমাধ্যম স্বাধীন না হলে সুষ্ঠু গণতন্ত্র চর্চা হবে না। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছিল না। সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করতে পারত না। কোনো সংবাদ তাদের বিপক্ষে গেলে বাসা থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন, বছরের পর বছর কারাবরণ করতে হয়েছে সাংবাদিকদের। নানা হয়রানি, গুম, খুন তো রয়েছেই। এর থেকে বাদ যায়নি সম্পাদক, কলামিস্ট, ফটোসাংবাদিক, সিনিয়র সাংবাদিকসহ সাংবাদিক নেতারা।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সভা শেষে বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মরহুম রুহুল আমিন গাজীর পক্ষে সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন তাঁর স্ত্রী ও ছেলে। সভায় জুলাই গণ অভ্যুত্থানে নিহত ছয় সাংবাদিক ও প্রবাসী সাংবাদিককে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়।
সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও পেশাজীবী পরিষদের সভাপতি ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমানের মতো বয়োজ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা নিগৃহীত হয়েছেন। ৬২ জন সাংবাদিক গুম হয়েছেন। আজ আবার সেই প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে আপনাদের কণ্ঠে। এটা বাদ গেলে ওইটা বাদ যাবে। এটা কি সঠিক? আপনি যদি আগামীর বাংলাদেশের কথা বলেন, তাহলে পুরোনো মানসিকতা নিয়ে তা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার আমলে গণমাধ্যম বাকরুদ্ধ অবস্থায় ছিল। এখন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ বলেন, মিডিয়ার কণ্ঠরোধ ও হুমকি দিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষা করা যায় না। গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে চলতে দিতে হবে। তা হলেই দেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় থাকবে। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনার আমলে ৬৭ জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন। সাংবাদিকরা নজিরবিহীন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সম্পাদকদের কোমড়ে দড়ি বেঁধে অফিস থেকে নিয়ে গেছে। আদালতে মারধরের শিকার হয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন অনেকেই। এর মধ্যে মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমান, আবুল আসাদ অন্যতম। তিনি আরও বলেন, গত ১৭ বছর গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছি।
অথচ বর্তমান সরকারের সুবিধাভোগী একটি দল এক মাস আন্দোলন করে গণমাধ্যমকে হুমকি দিচ্ছে। বিএনপি, জামায়াতকে উদ্দেশ করে কাদের গণি চৌধুরী বলেন, আপনারা যারা মঞ্চে উপবিষ্ট আছেন, ভবিষ্যতে আপনারা যদি গণমাধ্যমের গলাটিপে ধরেন তাহলে আপনাদের বিরুদ্ধেও আন্দোলনে যাব। আওয়ামী লীগের দালাল সাংবাদিকদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি মো. শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই সিকদার, দৈনিক আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল রহমান, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসান মাহবুব জুবায়ের, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বিএফইউজের সহসভাপতি এ কে এম মহসিন, প্রবাসী সাংবাদিক ইমরান আনসারী, ডিইউজের সহসভাপতি রাশেদুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক এম সাইদ খান, কোষাধ্যক্ষ খন্দকার আলমগীর হোসেন প্রমুখ।