সারাদেশে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। প্রশাসনের কঠোর লকডাউনের পরও নগরী ও উপজেলাগুলোর অলিগলিতে মাস্কহীন ঘুরছে সাধারণ মানুষ। সংক্রমণের হিসাব অনুযায়ী, চট্টগ্রাম নগরীর বাইরে উপজেলাগুলো করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে।
জেলার ১৪টি উপজেলার প্রতিটিতেই আক্রান্ত আছেই। তবে চট্টগ্রাম জেলার মধ্যে দক্ষিণের চেয়ে উত্তরে বেশি হচ্ছে এই সংক্রমণ। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
তাছাড়া চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ১১ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। এসময় জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্টে ৪৪ মামলা ও প্রায় ১৮ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে। বিধিনিষেধ মেনে না চলায় বিভিন্ন দোকান, রেস্টুরেন্ট এবং শপিংমলে অভিযান পরিচালনা করে অর্থদণ্ড প্রদান করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি পালনে সচেতন করা হচ্ছে বলে জানান চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক।
তিনি বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ বিস্তার রোধ করার লক্ষ্যে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে। একই কথা বললেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রেজওয়ানা আফরিনও।
অন্যদিকে, গত সাতদিনে বিধিনিষেধ না মানায় চট্টগ্রামে মামলা হয়েছে ৭৫১, গাড়ি আটক ৫৪০টি। চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ৭ দিনের চিত্র তুলে ধরেছেন সিএমপির মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আরফাতুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ১ জুলাই সকাল ৬টা থেকে বুধবার ৭ জুলাই রাত ৮টা পর্যন্ত এসব মামলা হয়েছে। কঠোর লকডাউনে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সঙ্গে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করেছে পুলিশ।
তাছাড়া বুধবার সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত লকডাউন অমান্য করে বিনা প্রয়োজনে গাড়ি নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়ায় ২৩৭টি মামলা ও ১১৪টি গাড়ি আটক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১ জুলাই থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত ৮ দিনের হিসেব মতে উপজেলাগুলোতে মোট শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ২৪৪ জন। এর মধ্যে উত্তর চট্টগ্রামের ৭ উপজেলায় শনাক্ত হয়েছে ৯৭৭ জন। সংক্রমণের হার ৭৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ। দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৭ উপজেলায় শনাক্ত হয়েছে ২৬৭ জন। সংক্রমণের হার ২১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এতে উত্তরের বেশি আক্রান্ত হয়েছে সীতাকুন্ডে ২৩৮ জন।
এছাড়া হাটহাজারীতে ১৮৭ জন, মিরসরাইয়ে ১৭৬ জন, রাউজানে ১৪২ জন, ফটিকছড়িতে ১২৪ জন, রাঙ্গুনীয়ায় ৮৫ জন এবং সন্দ্বীপ উপজেলায় ২৫ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। অন্যদিকে, দক্ষিণের উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হয়েছে পটিয়ায় ৪৭ জন। তাছাড়া আনোয়ারায় ৪৬ জন, বোয়ালখালীতে ৪৪ জন, বাঁশখালীতে ৩৪ জন, চন্দনাইশে ৩৩ জন, লোহাগাড়ায় ৩৩ জন এবং সাতকানিয়া উপজেলায় ৩০ জন শনাক্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, উপজেলাগুলোর জনগণ সাধারণত করোনা নিয়ে সচেতন নন। জ্বর-সর্দি-কাশি হলে চিকিৎসকের কাছে আসতে চান না। তাই এসব এলাকায় সংক্রমণের হার বাড়ছে। বর্তমানে সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে যত বেশি টেস্ট হবে, তত বেশি রোগী শনাক্ত করে চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/এমআই