সোমবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

দিনাজপুরে স্কুলে একসঙ্গে স্মৃতিসৌধ ও শহীদ মিনার

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

দিনাজপুরে স্কুলে একসঙ্গে স্মৃতিসৌধ ও শহীদ মিনার

দিনাজপুরসহ দেশের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে মহান ভাষা আন্দোলনের প্রতীক ‘শহীদ মিনার’। তবে নেই মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতায় আত্মদানের বিজয় দিবসের স্মৃতিসৌধ। কিন্তু দিনাজপুরের একটি স্কুলে নির্মাণ হচ্ছে জাতীয় স্মৃতিসৌধের আদলে নান্দনিক স্মৃতিসৌধ। পাশাপাশি থাকছে শহীদ মিনারও। আর মাঝে স্থাপিত হচ্ছে শহীদদের রক্তে অর্জিত বাংলাদেশের মানচিত্র। দেশে এটি কোনো বিদ্যালয়ে নির্মিত স্কুল কেন্দ্রিক প্রথম একই সঙ্গে স্মৃতিসৌধ ও শহীদ মিনার বললেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক।  মুজিববর্ষ উপলক্ষে সদর উপজেলা প্রশাসন ও বিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে দিনাজপুর শহরের সারদেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এই স্থাপনা নির্মাণ করছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নির্মাণাধীন স্মৃতিসৌধটি প্রস্থ ১৫ ফুট ও উচ্চতায় ২২ ফুট। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোসাদ্দেক হোসেন ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের বিষয়গুলো সরাসরি প্রত্যক্ষ করানোর ধারণা থেকেই এই নান্দনিক স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার এবং মাঝে মানচিত্রকে স্থান দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে নির্মাণাধীন এই স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার ও বাংলাদেশের মানচিত্র উদ্বোধনের কথা রয়েছে বলে জানায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক রতন কুমার রায়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সামনে পুরো স্বাধীনতার ইতিহাস ভেসে উঠনোর লক্ষ্যে এই প্রয়াস। ঐতিহ্যবাহী সারদেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি ইতিপূর্বেও শিক্ষার্থীদের কল্যাণে গড়া ২ টাকার ব্যাংক অনন্য উদাহরণ। হস্তশিল্প তৈরি এবং বিপণন, ল্যাবে বিজ্ঞান উপকরণ বক্স, বিজ্ঞান ক্লাব, লেখাপড়া, খেলাধুলায় প্রাপ্ত বিভিন্ন পুরস্কারসহ ভালো কাজের জন্য পরিচিতি এবং পত্রিকায় পাতায় শিরোনাম হয়েছে। ক্যাম্পাসে আছে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের নান্দনিক বাগান-শাপলা কর্নার। এসব সৃজনশীল কাজে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ কমিটির সুনাম অর্জন করেছে। সারদেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রী বলেন, ৩০ লাখ শহীদের বিনিময়ে আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে। এ বিদ্যালয়ে একই সঙ্গে স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার হচ্ছে এজন্য আমরা গর্বিত।

প্রতিটি বিদ্যালয়ে যদি এরকম স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয় তাহলে শহীদদের প্রতি আমাদের ভক্তি ও কৃতজ্ঞতাবোধ আরও বেড়ে যাবে। সহকারী শিক্ষক মোসাদ্দেক হোসেন জানান, দেশে শহীদ মিনার আছে, স্মৃতিসৌধ আছে, মানচিত্র আছে। প্রত্যেকটি অর্জনের পেছনে রয়েছে আন্দোলন, সংগ্রাম ও রক্ত দেওয়ার ইতিহাস। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমাদের এ বাংলাদেশ। বিষয়গুলোকে এক সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সামনে নিয়ে আসার বিষয়টি তুলে ধরলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমার ধারণাটি গ্রহণ করে একসারিতে শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ, আমাদের মানচিত্র নির্মাণের বিষয়টি অনুমোদন দেয়। যা নির্মাণাধীন রয়েছে। বিষয়টি একজন প্রকৌশলী বিদ্যালয়ের শুভাকাক্সক্ষী হিসেবে দেখাশোনা করছেন।

সারদেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতন কুমার রায় জানান, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোসাদ্দেক হোসেনের ধারণা থেকেই একই সঙ্গে স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার এবং মানচিত্রকে স্থান দেওয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মহান ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতায় আত্মদানের চেতনাবোধকে অনুধাবন করবে এবং হৃদয়ে ধারণ করতে পারবে। তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা এই বেদির সামনেই দাঁড়িয়ে পিটি প্যারেড করবে। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন হবে। সালাম-অভিবাদন জানাবে।  সারদেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, দেশের অনেক শিক্ষার্থীর গাজীপুরের জাতীয় স্মৃতিসৌধ সরাসরি দেখতে যাওয়ার সুযোগ হয় না। দেশের এক শতাংশ শিক্ষার্থীও হয়তো সরাসরি স্মৃতিসৌধ দেখেছে কি না সঠিক করে বলা যাবে না। তবে এখানে দুটোই অনুধাবন করতে পারবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

সর্বশেষ খবর