মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

দাবদাহে আমন ধানের মাঠ ফেটে চৌচির

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

দাবদাহে আমন ধানের মাঠ ফেটে চৌচির

বাংলা দিনপঞ্জির হিসাবে আষাঢ় মাস চলে গেছে। এখন চলছে শ্রাবণ মাস। কিন্তু এ ভরা বর্ষাতেও স্বাভাবিক বৃষ্টির দেখা নেই ধানের রাজধানী হিসেবে খ্যাত দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা নওগাঁয়। এতে কৃষকরা আমন ধান চাষ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। পানির অভাবে অনেক কৃষক সেচ দিয়ে চারা রোপণ করছেন। সেচ দিয়ে জমি প্রস্তুত ও ধান গাছ বাঁচিয়ে রাখতে এবার তাদের বিঘাপ্রতি বাড়তি ২ থেকে ৩ হাজার টাকা খরচ হবে। কৃষকরা জানান, বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ের সময় গত মে ও জুনে বৃষ্টির দরকার ছিল না। তখন প্রতিদিনই বৃষ্টি হয়েছিল। অনেক খেতের ধান পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছিল। ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে মাড়াইয়ের পর ধান ও ভুট্টা শুকাতে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। নষ্ট হয়েছিল খেতের সবজি। জুলাইয়ে আমন চাষের উপযুক্ত সময়, এখন বৃষ্টির দরকার কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই। গত ৩০-৩৫ দিনে নওগাঁয় ভারী বৃষ্টি হয়নি। এ সময়ে কখনো টিপটিপ, কখনো একপশলা বৃষ্টি হলেও বর্ষানিভর আমন চাষের জন্য তা যথেষ্ট নয়। নওগাঁর পত্নীতলার কৃষক মঞ্জুর এলাহী বলেন, এ বছর জমিতে আমন চাষ করতে চান। সে অনুপাতে আমনের বীজতলাও প্রস্তুত করেছেন তিনি। বীজতলার চারার বয়স অনুসারে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে আমন খেতে চারা রোপণের পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। কিন্তু সেই সময় পার হতে চললেও বৃষ্টির দেখা নেই। এদিকে বীজতলার চারাগাছগুলোর বয়স হয়ে যাওয়ায় লালচে হতে শুরু করে। সময়মতো রোপণ না করলে চারা গাছ নষ্ট ও উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে এ আশঙ্কায় গভীর নলকূপ দিয়ে সেচের ব্যবস্থা করে চারা রোপণের জন্য জমি প্রস্তুত করেন তিনি। এতে বিঘাপ্রতি বাড়তি ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে। একই গ্রামের কৃষক সুলতান হোসেন বলেন, গত ৩০-৩৫ দিন ধরে আমাদের এলাকায় একপশলা বৃষ্টিও হয়নি। মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে আছে। মাটিতে রস নেই, একেবারে শুকনা কাঠের মতো হয়ে আছে। এ জন্য সেচ দিয়ে মাটি ভিজাতে অনেক বেশি পানি লাগছে। এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আমন ধানের চাষ বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে। এ সময় বৃষ্টিপাত না হওয়াটা কৃষির জন্য অশুভ। বাড়তি খরচে ধান চাষ করে ন্যায্য দাম না পেলে তখন কৃষকের আরও মরণদশা হবে। সাপাহারের কৃষক রেজাউল করিম বলেন, আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বৃষ্টি নেই। আমরা কৃষকরা এটা ভাবতেই পারছি না। এ রকম বৈরী আবহাওয়া আমি কোনো দিন দেখিনি।

বৃষ্টি না হওয়ায় জমি প্রস্তুত করতে না পারায় বীজতলার চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমন মৌসুমের বাকি সময়েও বৃষ্টি না হলে কৃষকদের প্রতি বিঘা জমিতে আমন চাষে বাড়তি ২-৩ হাজার টাকা খরচ হবে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, আমনের চারা রোপণের উপযুক্ত সময় আষাঢ়ের শেষ সপ্তাহ থেকে শ্রাবণের শেষ পর্যন্ত। এবার মৌসুমের শুরু থেকেই স্বাভাবিক বৃষ্টির দেখা পাচ্ছেন না কৃষক। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে খেতে সেচ দিতে কৃষকের বাড়তি খরচ হবে। আবার খেতে আগাছা, রোগ ও পোকার আক্রমণ বেড়ে যাবে। এতে ধানের ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ বছর নওগাঁয় ১ লাখ ৯৭ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমনের বীজতলা প্রস্তুত করা হয়েছে ৩ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যে ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে চারা রোপণ করা হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক এ কে এম মনজুরে মাওলা বলেন, আমনের চারা রোপণের জন্য এখনো প্রায় এক মাস রয়েছে। শ্রাবণ মাসজুড়েই চারা রোপণ করা যাবে। এমনকি ভাদ্র মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চারা রোপণ করা যাবে। তবে যেসব কৃষকের বীজতলার চারার বয়স হয়ে যাচ্ছে তাদের সুযোগ থাকলে সেচ দিয়ে চারা রোপণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর