বুধবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

উদ্বোধনের আগেই হাসপাতালের কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর

উদ্বোধনের আগেই হাসপাতালের কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে

মাদারীপুর সদর হাসপাতালকে ১০০ থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের জন্য তৈরি করা হয়েছে সুদৃশ্য ভবন। কেনা হয়েছে কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। তবে উদ্বোধনের আগেই অযত্ন-অবহেলায় সেই যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ভেঙে গেছে নবনির্মিত হাসপাতালের দরজা-জানালা। স্থানীয়দের দাবি দ্রুত হাসপাতাল চালু আর যাদের অবহেলায় যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে তাদের বিচারের আওতায় আনার। মাদারীপুর স্বাস্থ্য বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা জানালেন, জনবল সংকটের কারণে শুরু করা যাচ্ছে না সদর হাসপাতালের নতুন ভবনের কার্যক্রম। তবে দ্রুতই হাসপাতাল চালু করা হবে বলে জানান তিনি। হাসপাতালসূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ শেষ করা হয় মাদারীপুর সদর হাসপাতালের নতুন ভবন। রোগীর সেবার জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার সমাহারে তৈরি করা হয় ভবন। কেনা হয় কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। শুধু সিটিস্ক্যান মেশিনই কেনা হয় প্রায় ৩ কোটি টাকা দিয়ে। এ ছাড়া ডিজিটাল এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন, আধুনিক জেনারেটরসহ কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রপাতি রয়েছে হাসপাতালের নতুন ভবনে। ব্যবহান না করা এবং অযত্ন-অবহেলায় অধিকাংশ যন্ত্রপাতি নষ্টের উপক্রম। সরেজমিন দেখা গেছে, নানা সংকটে জর্জরিত মাদারীপুর সদর হাসপাতাল। নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসক। অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানের অভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না আধুনিক যন্ত্রপাতি। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। এতে চরম বিপাকে রোগীরা। তিন বছর আগে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের লক্ষ্যে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। তবে শুরু হয়নি ২৫০ শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রম। হাসপাতালটি বর্তমানে ১০০ শয্যার হলেও জনবল রয়েছে ৫০ শয্যার কম। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন চিকিৎসক সংকট ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অনুপস্থিতিসহ নানা সমস্যায় ব্যাহত হচ্ছে সদর হাসপাতালের কার্যক্রম। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে অনেক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি না করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা অন্য কোনো বেসরকারি হাসপাতালে পাঠাচ্ছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালে নেই কোনো চক্ষু বিশেষজ্ঞ, রেডিওলজিস্ট। দক্ষ টেকনিশিয়ান না থাকায় করা যাচ্ছে না আল্ট্রাসনোগ্রাম ও উন্নতমানের পরীক্ষা, নষ্ট হচ্ছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। রোগীদের অভিযোগ, চিকিৎসকরা নিয়মিত রোগীও দেখেন না। হাসপাতালের মূল্যবান যন্ত্রপাতির ওপর পড়ছে পানি। ভেঙে গেছে হাসপাতালের দরজা-জানালা। ২৫০ শয্যা হাসপাতালের জন্য দরকার ২৬৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। রয়েছেন ১৩৩ জন। স্থানীয়রা দাবি জানিয়েছেন দ্রুত হাসপাতাল চালু করার। স্থানীয় বাসিন্দা তাজুল ইসলাম বলেন, ‘যাদের অবহেলায় যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে তাদের বিচার করা হোক।’

আরেক বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালটি চালু না হওয়ায় সেবাবঞ্চিত স্থানীয়রা। নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি। তাই হাসপাতাল চালুর দাবি জানাই।’ মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘মূল্যবান সিটিস্ক্যান মেশিনসহ বিভিন্ন ধরনের মেশিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই এটা দ্রুত চালু হোক। এতে আমাদের সেবার মান বাড়বে, কমবে ভোগান্তি।’

মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডা. মুনির আহমেদ খান বলেন, ‘জনবল সংকটের কারণে হাসপাতালের নতুন ভবনে কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। তবে আপাতত নতুন ভবনে ৫০ বেডের কার্যক্রম আগামী দুই মাসের মধ্যেই শুরু হবে। নষ্ট যন্ত্রপাতিও মেরামত করা হবে।’

সর্বশেষ খবর