রবিবার, ২১ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

বেহাল প্রাচীন ঐতিহ্য কুয়া

খন্দকার একরামুল হক সম্রাট, কুড়িগ্রাম

বেহাল প্রাচীন ঐতিহ্য কুয়া

প্রাচীন ঐতিহ্য কুয়া। যাকে গ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলে চুয়া বা ইন্দারা। অর্থাৎ মাটি খনন করে গভীর গর্তের ভিতর গোলাকার কূপকে বলে কুয়া বা ইন্দারা। দীর্ঘ শত বছর পুরনো আমলে এ কুয়ার প্রচলন ছিল বেশ। কিন্তু ইদানিং আর সেসব খুব একটা চোখে পড়ে না, যা এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। যখন ছিল না নলকূপ কিংবা পানি উত্তোলনের যন্ত্র তখন মানুষ পুরো নির্ভর ছিলেন এ কুয়া বা ইন্দারার ওপর। মানুষের পানের জন্য সুপেয় পানি হিসেবে গ্রামে একমাত্র উৎস ছিল এই কুয়া। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পল্লীবধূরা কলসি কাঁধে করে এ কুয়ার পানি আনা-নেওয়া করতেন। গ্রামের অতি সাধারণ মানুষ হাল চাষ শেষে একসঙ্গে কুয়ার পানি দিয়ে গোসল করে গা জুড়াতো। এখন সে দৃশ্য আর চোখে পড়ে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টেছে জীবন ব্যবস্থা। প্রায় ৯০ থেকে ১০০ বছর পূর্বে গ্রামে-গঞ্জে সুপেয় পানি পানের জন্য এরকম কুয়া নির্মাণ করা হয়। সংস্কারের অভাবে প্রাচীন আমলের ঐতিহ্যের এ কুয়া বা ইন্দারাগুলো এখন বিলুপ্তির পথে। কুয়া বা ইন্দারা যাকে আঞ্চলিক ভাষায় এ নামে ডাকা হয় চুয়া বা ইন্দারা। এর প্রকৃত নাম হলো ইন্দ্রাগার। সংস্কৃত শব্দটি ইন্দ্র ও আগার থেকে এসেছে। ইন্দ্র অর্থ বৃহৎ, আগার অর্থ কূপ। অর্থাৎ ইন্দ্রাগার শব্দের অর্থ হলো বৃহৎ কূপ। এক ধরনের বড় কূপ যাকে বলি কুয়া। আধুনিকতার ছোঁয়ায় নলকূপের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে এসব ঐতিহ্যবাহী কুয়া বা ইন্দারা। মানুষ শিক্ষিত ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগে নলকূপ বা মেশিন বসিয়ে মাটির গভীর থেকে পানি উত্তোলন করে এখন তাদের পানির চাহিদা পূরণ করছে। সরেজমিন জানা যায়, জেলার পৌর এলাকার কয়েকটি স্থানে অনুসন্ধানে ১০টি কুয়ার খোঁজ পাওয়া গেছে। এগুলো হলো কুড়িগ্রাম পৌরসভার হোসেন খাঁপাড়া ফকরিয়া মসজিদ-সংলগ্ন একটি, মাঝিপাড়ায় দুটি, খানপাড়ায় একটি, হরিকেশ কানিপাড়ায় একটি, হরিকেশ মধ্যপাড়ায় দুটি, সবুজপাড়ায় একটি, জাহাজঘর মোড়ে একটি ও পুরনো রেল স্টেশনের পূর্বদিকে একটিসহ মোট ১০টি কুয়া। তন্মধ্যে শুধু সবুজপাড়ার কুয়াটি এখন গ্রাম্য মানুষকে সেবা দিচ্ছে। এখনো পানি খাওয়াসহ সব কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। পৌর এলাকার গুয়াতিপাড়ার আবদুস সামাদ জানান, হোসেন খাঁপাড়ায় এ কুয়াটি অনেক প্রাচীন। এটাকে আমরা বলি ইন্দারা। এর বয়স প্রায় ১০০ বছরেরও বেশি। এ ইন্দারাটি ১৯২৪ সালে নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু সংস্কারের অভাবে এটি এখন অকেজো। পূর্বে এ ইন্দারার পানি গ্রামের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ব্যবহার করত। এরকম ইন্দারা কুড়িগ্রামে অনেক জায়গায় নষ্ট হয়ে মাটির সঙ্গে বিলীন হয়ে গেছে। এখন আর চোখে পড়ে না। পুরনো পোস্ট অফিসপাড়ার সুলতান আহমেদ বলেন, জাহাজঘর মোড়ের ইন্দারাটি অনেক পুরনো। বর্তমান কুয়াটির ওপরের অংশ ভালো আছে। কিন্তু ভিতরটা একটু সংস্কার করলেই পুনরায় চালু করা যেতে পারে। এ ছাড়া এটা বাজার এলাকা, এখানে কোনো পুকুর নেই। পানির প্রয়োজনে এটি সংস্কার করলে অনেক উপকার হবে।তিনি বলেন, এ কুয়াটি যদি পৌরসভার উদ্যোগে সংস্কার করা যায় তাহলে যেমন সুপেয় পানির চাহিদাও পূরণ হবে তেমনি কোনো স্থাপনায় আগুন লাগলে অগ্নিনির্বাপণেও এর পানি কাজে লাগবে। এ ব্যাপারে মেয়র কাজিউল ইসলাম বলেন, পৌর এলাকায় অনেক কুয়া থাকলেও এখন মানুষ এর ব্যবহার কমিয়ে দেওয়ায় এগুলো বিলুপ্তির পথে।

সর্বশেষ খবর