বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ তাদের রংপুর বিভাগীয় সমাবেশে দ্রুত ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। গতকাল বিকালে মাহিগঞ্জ কলেজ মাঠে এ সমাবেশ হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাগরণ মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। সমাবেশে জাতীয় হিন্দু মহাজোট ও সংখ্যালঘু মোর্চাসহ অন্যান্য হিন্দু সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও অংশ নেন। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সহ-মুখপাত্র গোপীনাথ ব্রহ্মচারী, বিভাগের সমন্বয়ক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, মানিক চৌধুরী, রতর রায়, সুজন রায়, আলোক ঘোষ, রবীন্দ্রনাথ প্রমুখ। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন, অবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন।
সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে ‘হিন্দু ফাউন্ডেশন’-এ উন্নীত করাসহ বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মীয় ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে রূপান্তর, ‘দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন’ প্রণয়ন এবং ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন’-এর যথাযথ বাস্তবায়ন, সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোতে সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ ও প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনা কক্ষ বরাদ্দ করা, ‘সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড’ আধুনিকায়ন এবং দুর্গাপূজায় পাঁচ দিন ছুটিসহ প্রতিটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবে প্রয়োজনীয় ছুটির ব্যবস্থা করা।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী তাঁর বক্তৃতায় বলেন, একাত্তরে দেশ স্বাধীনের আন্দোলনে যারা ভারতে পালিয়ে জীবন রক্ষা করেছিলেন তাদের ৭০ শতাংশই হিন্দু। তাদের বাড়িঘর লুটপাট সম্পত্তি দখল করা হয়েছে। স্বাধীনতার এত বছর পরেও ওই ধারা অব্যাহত রয়েছে। মওলানা ভাসানী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমানসহ সব দেশপ্রেমিকের মূল্যায়ন করতে হবে। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর কারাগার থেকে সন্ত্রাসী, রাজনীতিবিদ, জঙ্গিরা মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু কোনো হিন্দু মুক্তি পাননি। তিনি সংবিধানের মূল চার নীতি ঠিক রাখার দাবি জানিয়ে বলেন, হিন্দুরা কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থক নয়। আগামীতে যে দল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে পারবে সনাতনীরা সেই দলকে ভোট দেবেন। ৩ কোটি সনাতনী আজ ঐক্যবদ্ধ।
সমাবেশ কর্মসূচি ঘিরে বিভাগের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বেশ কয়েক দিন থেকে নানা প্রস্তুতি নিয়েছিল। প্রথমে জিলা স্কুল মাঠে সমাবেশ করার কথা থাকলেও অনুমতি না পাওয়ায় মাহিগঞ্জ কলেজ মাঠে সমাবেশ করা হয়। সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে সনাতন ধর্মালম্বলীরা আসতে শুরু করে সকাল থেকে। অনেকেই এক দিন আগে এসেছেন। তবে সনাতনধর্মীদের অভিযোগ, দিনাজপুরসহ কয়েকটি রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে অনেকে অটোরিকশাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সমাবেশ আসেন। দুুপুরে সনাতন ধর্মের একদল লোক সমাবেশে আসার সময় কাউনিয়ায় হামলার শিকার হন। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। আহতদের মধ্যে দুজনের নাম পাওয়া গেছে, তারা হলেন, লালমনিরহাটের লালমোহন, কুড়িগ্রামের রাজারহাটের স্বপন কর্মকার। শুক্রবার দুপুরে সমাবেশে যোগ দিতে যাওয়ার সময় একদল লোক কাউনিয়া বাসস্ট্যান্ডের কাছে তাদের বাধা দেন ও মারপিট করেন। আহতদের প্রথমে কাউনিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে রংপুর হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ বিষয়ে কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহিদুল হক বলেন, একটি ঘটনা ঘটেছে। বিস্তারিত কিছু জানি না।