অনেক গুঞ্জন ও নানা খবরের পর অবশেষে আনুষ্ঠানিকতার আলোয় আসলেন ফ্লোরিয়ান ভির্টজ। ট্রান্সফার ফির রেকর্ড ভেঙেচুরে বায়ার লেভারকুজেন থেকে জার্মান মিডফিল্ডার পাড়ি জমালেন লিভারপুলে। অনুমিতভাবেই লিভারপুলের ইতিহাসে সবচেয়ে দামি ফুটবলার এখন ভির্টজ।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম গত কিছুদিনে যেমন বলেছিল, সেই ১০ কোটি পাউন্ডেই ২২ বছর বয়সী মিডফিল্ডারকে দলে পেয়েছে ইংলিশ চ্যাম্পিয়নরা। নানা বোনাস মিলিয়ে লেভারকুজেন পেতে পারে আরও এক কোটি ৬০ লাখ পাউন্ড।
এতদিন লিভারপুলের সবচেয়ে দামি ফুটবলার ছিলেন ভার্জিল ফন ডাইক। ক্লাবের এখনকার অধিনায়ক ২০১৭ সালে সাড়ে সাত কোটি পাউন্ডে যোগ দিয়েছিলেন এই ঠিকানায়। ভির্টজকে দিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে ১০ কোটি পাউন্ড প্রাথমিক ট্রান্সফার ফির ফুটবলার এখন পাঁচজন। এমন বিশাল অঙ্ক খরচ করেই চেলসি এনেছে দুই মিডফিল্ডার এন্সো ফের্নান্দেস ও মোইসেস কাইসেদোকে, আর্সেনালে যোগ দিয়েছেন ডেক্লান রাইস ও ম্যানচেস্টার সিটিতে জ্যাক গ্রিলিশ।
লেভারকুজেনে চুক্তির দুই বছর বাকি ছিল ভির্টজের। তাকে দলে পেতে আগ্রহ ছিল বায়ার্ন মিউনিখ ও ম্যানচেস্টার সিটির মতো ক্লাবের। তবে লিভারপুল লড়াইয়ে এগিয়ে যায় বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই। নানা টানাপোড়েনের পর অবশেষে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ায় উচ্ছ্বসিত জার্মান এই মিডফিল্ডার।
২২ বছর বয়সী ভির্টজের সঙ্গে ক্লাবের রেকর্ড সর্বোচ্চ ১১৬ মিলিয়ন পাউন্ডে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১৯০৮ কোটি টাকা। আর্নে স্লটের দলটির সঙ্গে তার চুক্তি হয়েছে ৫ বছরের জন্য, অর্থাৎ ২০৩০ সাল পর্যন্ত। যেখানে তাকে শুরুতে ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড দেওয়া হবে। ‘অ্যাড-অনস’ ও আর কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে বাকি ১৬ মিলিয়ন পাউন্ড দেবে লিভারপুল। ইতোমধ্যে শুক্রবার ভির্টজের স্বাস্থ্য পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কেবল লিভারপুলই নয়, ব্রিটিশ দলবদল বাজারের অতীত রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছে এই জার্মান প্রতিভার দাম। ২০২৩ সালে আর্জেন্টিনার মিডফিল্ডার এনজো ফার্নান্দেজকে পর্তুগিজ ক্লাব বেনফিকা থেকে ১০৭ মিলিয়ন পাউন্ডে নিয়ে এসেছিল প্রিমিয়ার লিগের সাবেক চ্যাম্পিয়ন চেলসি। সেই রেকর্ড ভেঙে একই বছর ১১৫ মিলিয়ন পাউন্ডে ক্লাবটি ময়েসেস কায়কেদোকে নেয়। অ্যানফিল্ডের ক্লাব লিভারপুল এবার তাদেরও ছাড়িয়ে গেছে। যা নতুন মৌসুম শুরুর আগে ক্লাবটি দ্বিতীয় বড় সাইনিং। লেভারকুজেনের হয়ে ১৯৭ ম্যাচে ৫৭ গোল করেছেন ভির্টজ। ২০২০ সালে অভিষেকের পর বুন্দেস লিগায় তিনি তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪৪টি অ্যাসিস্ট এবং ওপেন প্লে থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫৩টি সুযোগ তৈরি করেন।
ফ্লোরিয়ান ভির্টজ বলেন, “সত্যিই খুব খুশি আমি, দারুণ গর্বিতও। অবশেষে এটা শেষ হলো, অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করছিলাম… শেষ পর্যন্ত এটা হলো এবং অনেক ভালো লাগছে।”
তিনি আরও বলেন, “সামনের নতুন অভিযান নিয়ে আমি দারুণ রোমাঞ্চিত। আমার ক্লাব পরিবর্তনের ভাবনায় এটাও বড় একটা ব্যাপার ছিল, বুন্ডেসলিগা থেকে প্রিমিয়ার লিগে আসা এবং পুরোপুরি নতুন পথে চলা শুরু করা।”
২০২৩-২৪ মৌসুমে লেভারকুজেনের ইতিহাস গড়া শিরোপা জয় ও রেকর্ড-গড়া অপ্রতিরোধ্য মৌসুমে দলের প্রাণভ্রোমরা ছিলেন ভির্টজ। সদ্য সমাপ্ত মৌসুমে লেভারকুজেনে ৪৫ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন তিনি ১৬টি, সহায়তা করেছেন ১৫ গোলে। বুন্ডেসলিগায় গত দুই মৌসুমে ১০টির বেশি করে গোল করা ও সহায়তা করা একমাত্র ফুটবলার তিনিই।
সব মিলিয়ে জার্মান ক্লাবটিতে ১৯৭ ম্যাচ খেলে ৫৭ গোল তার, অ্যাসিস্ট ৬৫টি। দেশের জার্সিতে এখনও পর্যন্ত খেলেছেন ৩১ ম্যাচ। লিভারপুলে মাঝমাঠ এমনিতেই বেশ শক্তিশালী। তাকে পেয়ে তা সমৃদ্ধ হলো আরও।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম