ঠাকুরগাঁও জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ১৩টি নদীই এখন মৃতপ্রায়। এসব নদীর বুকে ধু ধু বালুচর। সেই চরে চাষ হচ্ছে নানা ফসল। সর্বনাশ হয়েছে জেলে, মাছ চাষিদের। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। সেচের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে আশপাশের এলাকার চাষাবাদ।
ঠাকুরগাঁওয়ের নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে- টাংগন, সেনুয়া, ভুল্লী, ঢেপা, শুক, অহনা, তিরনই, কুলিক, লাচ্ছি, চরনা ও নাগর। এগুলো এখন পুরো বালুচর। প্রতিটি চরে চাষ হয়েছে বোরো ধান। সরেজমিন দেখা যায়, এ বছর জেলার ছোট-বড় নদীগুলোতে বোরো ধান আবাদ করেছেন সহস্রাধিক কৃষক। নদীজুড়ে ধানের সবুজ গাছ বাতাসে দোল খাচ্ছে। চাষিরা জানান, তাদের অনেকের নিজস্ব জমি নেই। তারা নদীর চরে চাষাবাদ করছেন। নদীর চুইয়ে আসা পানি বোরোর জন্য দারুণ কাজ করছে। এতে সার ও সেচসহ সব কিছুতেই সাশ্রয় হচ্ছে খরচ। স্থানীয় মাছ শিকারি দেবারু ও সামসুল বলেন, আগে নদীতে অনেক মাছ পাওয়া যেত। এখন নদী পানিশূন্য। সেখানে ধান চাষ হচ্ছে। মাছ নেই বললেই চলে। যারা নদীতে ধান আবাদ করছেন তারা বিভিন্ন সার-কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। এটা মাছের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
ভূমিহীন চাষিরা জানান, ৮-১০ বছর ধরে তারা জেগে ওঠা নদীর চরে বোরো ধান চাষ করছেন। প্রথমে বালুচরকে বোরো চাষের উপযোগী করে তোলার চেষ্টা করেন তারা। দুই মাস পরিশ্রম করে বেদা ও কোদাল দিয়ে বালু সরিয়ে আইল বেঁধে পানি সংগ্রহ করা হয়। নদীচরে বোরো ধান চাষে বিঘাপ্রতি খরচ হয় ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে ধান পাওয়া যায় ২২ থেকে ২৫ মণ। তা দিয়েই ভূমিহীন কৃষকদের কয়েক মাসের খাবারের জোগান হয়।
নদীরক্ষার বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম জাকারিয়া বলেন, খনন করার পরও নদীতে পানি থাকছে না। এর কারণ হচ্ছে এ জেলায় দিন দিন ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে চলে যাচ্ছে। এ ছাড়া নদীগুলোর স্রোত খাড়া হওয়ায় পানি দ্রুত নেমে যায়। নদী রক্ষায় কাজ চলছে। যারা নদীতে ধান চাষ করছেন আমরা তাদের বারবার বলেছি, নদীর চরে চাষাবাদ না করার জন্য।