বৈশ্বিক বিরূপ প্রভাবে দেশের অর্থনৈতিক সূচকে মন্দা চলছিল। এরই মধ্যে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে চলা স্থবিরতা কাটাতে দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। দেশের সাধারণ মানুষও গণতান্ত্রিক নির্বাচিত সরকারের আশা পোষণ করে আসছে। এ অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা ইতিবাচক সংকেত হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা।
ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা, আইন-শৃঙ্খলা স্থিতিশীল এবং ব্যবসা-বিনিয়োগের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে নির্বাচিত সরকার জরুরি বলে মত দিয়ে আসছেন ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও পেশাজীবীরা। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন ও নির্বাচিত সরকারের হাতে দেশ থাকলে ব্যবসায় আস্থা ফিরবে—এমনটি মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁদের মতে, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করে।
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে দেশের মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে। তখন নির্বাচিত সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা অনেক বেশি বাড়বে।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সাবেক পরিচালক ও ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ‘রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থাহীনতা আছে। নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়ার ঘোষণায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
লন্ডনে বৈঠকের পরের যৌথ ঘোষণা ইতিবাচক সংকেত হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা মনে করছেন, গণতান্ত্রিক পন্থায় জবাবদিহির প্রক্রিয়া আছে। আসছে নির্বাচন যেন একদলীয় নির্বাচন না হয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হয়। আশা করছি, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক নির্বাচন হবে। এটি হলে ব্যবসার যে অনিশ্চয়তা কাজ করছে তা কেটে যাবে। অনেক নীতি কাঠামোর বিষয়ে ব্যবসায় ঝুঁকি অনুভব করছে। বিদেশিরা নির্বাচিত সরকার ছাড়া বিনিয়োগে এগিয়ে আসছে না।’
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান সরকারের কাছে সবার অনেক আশা ছিল। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও শিল্পের জ্বালানিতে উন্নতি হয়নি। বরং বেসরকারি খাতের ব্যবসায় সরকারের নজর কম। এই কারণে বিদ্যমান ব্যবসায়ীরা ভুগছেন। বেসরকারি খাতে আস্থার ঘাটতি থাকায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে দেশও পিছিয়ে আছে। নির্বাচনের ঘোষণা ব্যবসায়ীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। নির্বাচিত সরকার অঙ্গিকার নিয়ে আসে। তারা এলে ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তখন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থাও বেশি বাড়বে। তখন অনেকটা অস্বস্তিতে থাকা ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে। এ জন্য যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা দরকার। গত শুক্রবার পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা ছিল। এখন নির্বাচনের ঘোষণা ব্যবসায়ীদের মনে ইতিবাচক সংকেত দিচ্ছে।’
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয়ে একটা সমঝোতার দিকে অগ্রসর হচ্ছে—এটি একটি ইতিবাচক দিক। সব রাজনৈতিক দলের সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা দিলে তখন ব্যবসা ও অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা কাটবে। তবে নির্বাচনের জন্য সমঝোতার ভিত্তিতে অগ্রসর হওয়ার বিষয়টি অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর কারার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে এমন ইঙ্গিত বহন করছে।’