দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলরাশি বাংলাদেশের কাপ্তাই হ্রদকে দূষণমুক্ত এবং কচুরিপানা অপসারণ করতে একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা।
উল্লেখ্য, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনে খরস্রোতা কর্ণফুলি নদীর ওপর রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে ১৯৬০ সালে নির্মিত হয় কাপ্তাই বাঁধ। এতে সৃষ্টি হয় বিশাল জলরাশি কাপ্তাই হ্রদ- যার আয়তন প্রায় সাড়ে ৭শ’ বর্গকিলোমিটার। এ হ্রদ সৃষ্টির ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি জেলা সদরের সঙ্গে আট উপজেলায় গড়ে ওঠে নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা। এছাড়াও হ্রদটি পরিণত হয় মিঠা পানির মৎস্য ভান্ডারে।
জেলাজুড়ে গড়ে ওঠে ব্যবহার্য্য পানীয় জলের সুবিধা। একই সঙ্গে প্রতি বছর শুস্ক মৌসুমে হ্রদে ভেসে ওঠা জমিতে বোরো চাষ এবং পর্যটনের অপার সম্ভাবনাসহ বহুবিধ সুবিধা গড়ে ওঠে। কিন্তু দীর্ঘ ৫৬ বছরেও ড্রেজিং না করায় ক্রমে ভরাট হচ্ছে হ্রদের তলদেশ।
এছাড়া প্রতিনিয়ত প্রচুর বর্জ্য, ময়লা, আবর্জনা, বিষাক্ত ও রাসায়নিক দ্রব্য নিক্ষেপের ফলে হ্রদের পানি দূষণের শিকার হচ্ছে বলে জানান গবেষকরা।
জাতীয় পরিবেশবাদী সংগঠন এনজিও ফোরাম ফর ড্রিংকিং ওয়াটার’ এর এক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যে কাপ্তাই হ্রদের পানি অনিরাপদ ও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে হ্রদজুড়ে প্রতিনিয়ত কচুরিপানার জট তৈরি হওয়ায় নৌ পরিবহন চলাচলে সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা বলেন, কাপ্তাই হ্রদে কচুরিপানার কারণে নদীপথে নৌ চলাচলে মারাত্মক বিঘ্নিত হচ্ছে। এর ফলে নদীপথে যাতায়াত, রোগী আনা-নেয়া, কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য পরিবহনে নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। হ্রদের কচুরিপানা অপসারণ করা না হলে সংকট থেকে উত্তরণের কোনো উপায় নেই। পাশাপাশি হ্রদকে দূষণমুক্ত করে হ্রদের পানি ব্যবহার উপযোগী করা খুবই দরকার। এ জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে প্রধামন্ত্রীর দেয়া নির্দেশে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে জেলা পরিষদ, মৎস্য বিভাগ, মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন, মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউট, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সমন্বিতভাবে কাজ করবে। তবে প্রকল্পে কত বরাদ্দ লাগতে পারে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
তিনি আরও জানান, প্রকল্পটির খসড়া প্রণয়নে ২৪ ফেব্রুয়ারি একটি সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় রাঙামাটি জেলা পরিষদের মুখ্যনির্বাহী কর্মকর্তা এসএম জাকির হোসেনসহ অন্য কর্মকর্তারা এবং সিভিল সার্জন ডা. স্নেহ কান্তি চাকমা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের রাঙামাটির উপ-পরিচালক রমণী কান্তি চাকমা, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) রাঙামাটির উপ-ব্যবস্থাপক মাসুদুল আলম, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ফেরদৌসী বেগম, মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউটের কর্মকর্তা মো. আবুল বাশার উপস্থিত ছিলেন।
সভায় কাপ্তাই হ্রদকে দূষণমুক্ত রাখতে এবং হ্রদের কচুরিপানা অপসারণসহ এর সার্বিক ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশগত উন্নয়ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর জনগণের দুর্দশা লাঘবে কাপ্তাই হ্রদ দূষণমুক্ত ও কচুরিপানা অপসারণের জন্য প্রথমে একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ এবং পরবর্তীতে এ প্রকল্পের অভিজ্ঞতা যাচাই ও মূল্যায়ন সাপেক্ষে একটি পূর্ণ প্রকল্প প্রণয়নের জন্য প্রস্তাব ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৯ ফেব্রুয়ারি ১৬/ সালাহ উদ্দীন