দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরের বাবুপাড়া হরিজন পল্লীর সুফিয়া রানী বাসফোঁরের (৪৫) চোখে-মুখে এখন আনন্দের ঝিলিক। তার বংশে প্রথমবারের মতো কেউ এসএসসি'র গণ্ডি পার হলো। ছেলে আলাল বাসফোঁরকে নিয়ে এখন স্বপ্নের জাল বুনছে মা সুফিয়া। অনেক বড় হবে আলাল। সমাজে আর হরিজন হয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের পাত্র হবে না। কিন্তু সেই স্বপ্নের রঙ বার বার যেন ফিঁকে হয়ে যাচ্ছে, যখন ছেলের উচ্চশিক্ষার কথা মাথায় আসছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করে যেখানে দু'বেলা দু'মুঠো অন্ন জোগাড় করা কষ্ট, সেখাবে কীভাবে ছেলের পড়ার খরচ মেটাবেন সুফিয়া বাসফোঁর?
আলাল বাসফোঁর (১৭) এ বছর জিপিএ-৪.৩৬ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করেছেন। আলালের মতো পার্বতীপুরের আরও ১১জন দরিদ্র হরিজন ছাত্র এবার এসএসসি পাশ করেছেন। এরা হলেন- নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার সোনাখুলি ঋষিপাড়ার তাজেল ঋষি জিপিএ-৩.৮৩, জয়দেব ঋষি জিপিএ-৩.৮৩, উলাল ঋষি জিপিএ-৩.০০ ও সৈয়দপুর পৌর সভার সুরকি মহল্লার সঞ্জয় বাসফোঁর জিপিএ-৪.১৪, ফুলবাড়ী উপজেলার সুজাপুরের নয়ন বাসফোঁর জিপিএ-৪.১৭ ও রকি কুমার বাসফোঁর জিপিএ-৪.৪৩। এছাড়াও পার্বতীপুর শহরের বাবুপাড়া হরিজন পল্লীর শিবা বাসফোঁর জিপিএ-৪.৫৭, অজয় বাসফোঁর জিপিএ-৪.৩২, রবিলাল বাসফোঁর জিপিএ-৪.৫০, সোহাগ কুমার বাসফোঁর জিপিএ-৪.২৯ ও সঞ্জিত কুমার বাসফোঁর জিপিএ-৪.৩৯। এদের সকলের সাথে আলাদাভাবে কথা হয় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে। প্রত্যেকেই তাদের উচ্চশিক্ষা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
সুফিয়া রানী বাসফোঁর সাংবাদিকদের জানান, তার বংশে এর আগে কেউ এসএসসি'র গণ্ডি পেরুতে পারেনি। তার ইচ্ছে ছেলে যতদূর চায় পড়ুক। সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করুক। ছেলের লেখাপড়া শেখার কাজে সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন গ্রাম বিকাশের প্রতি। তবে বেশিরভাগ অভিভাবকই তাদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা লাভ সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত।
ফুলবাড়ী শহরের সুজাপুর মহল্লার নয়ন বাসফোঁরের মা মুন্নী রানী বাসফোঁর বলেন, এবারে যে ১২জন হরিজন ছাত্র এসএসসি পাশ করেছে তাদের অভিভাবকেরা প্রায় সবাই পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কাজ করেন। সামান্য আয় দিয়ে সংসার চালানোই কঠিন, সেখানে লেখাপড়া কীভাবে করাবে?
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ