ঘূর্ণিঝড় 'রোয়ানু' মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে বাগেরহাট জেলা। মংলা বন্দরে অবস্থানরত সব জাহাজের পণ্য ওঠানামার কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। মংলা বন্দরে অবস্থানরত সকল দেশী-বিদেশী বানিজ্যিক জাহাজগুলোকে নিরাপদে সতর্কতাবস্থায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া নৌবাহিনীর বিএনএস মংলা নৌঘাটির সকল যুদ্ধ জাহাজসহ কোস্টগার্ডের অন্যান্য নৌযানগুলোকে নিরাপদ স্থানে নোঙ্গর করে রাখা হয়েছে। শরণখোলার ৭৬টিসহ জেলার অপর ৮ উপজেলায় সর্বমোট ২৩৫টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এসব আশ্রয়কেন্দ্রে দুর্যোগকালিন সময়ে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে বলে জানিয়েছেন, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলম।
এদিকে সর্ব সাধারণকে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে শুকনা খাবার ও পানি। ৯টি উপজেলাসহ মংলা বন্দর, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড,পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০টি কন্টোল রুম খোলা হয়েছে।
প্রস্তুত রাখা হয়েছে রেড ক্রিসেন্টসহ সকল সেচ্ছাসেবি প্রতিষ্ঠানকে। বাগেরহাটের উপকূলীয় এলাকা জুড়ে সময়ের সাথে সাথে বাতাসের তীব্রতাও বেড়ে চলেছে। নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে দেড় থেকে দুই ফুট পানির উচ্চতা বেড়েছে।
এরইমধ্যে শুক্রবার দুপুর থেকেই বৃষ্টি শুরু হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আতংঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সক্ষম নয় পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের এমন অফিস সমুহ থেকে কর্মকর্তা- কর্মচারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যেই ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সকল সরকরী- আধা সরকারী কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ছুটিও বাতিল করে তাদের কর্মস্থলে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসাবে জেলার ৯ উপজেলায় ৯টি মেডিকেল টিম খোলা হয়েছে।
এছাড়া জেলার সকল উপজেলা এবং ইউনিয়নে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এদিকে বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় জেলার উপকূলীয় নদ-নদীতে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে কয়েক শত মাছ ধরা ট্রলার ও জেলেরা। ঘূর্ণিঝড় 'রোয়ানু' আরও শক্তি সঞ্চয় করে উপকূলের দিকে ধেঁয়ে আসায় আবহাওয়া অধিদপ্তর মংলা বন্দরে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত জারির পর বাগেরহাটের জেলা প্রশাসন এসব পদক্ষেপ নিয়েছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তর মংলায় ৬ নম্বর বিপদ সংকেত জারির সাথে-সাথেই তাৎক্ষণিক ভাবে জেলার উপকূলীয় সকল জনসাধারণকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার কাজ শুরু করবে প্রশাসন এবং সেচ্ছাসেবকরা। এজন্য উপকূলীয় জেলার ২৩৫টি ঘূণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তত করা হয়েছে। বিশুদ্ধ পানি ও চিড়া, গুড়সহ শুকনা খাবার মজুদ রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ মোকাবেলায় সকল ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সহকারী ব্যবস্থাপক (ট্রাফিক) কাজী মোক্তাদির হোসেন বলেন, বন্দরে অবস্থানরত দেশি-বিদেশি জাহাজসহ সকল প্রকার নৌযানকে নিরাপদে রাখতে জাহাজের ক্যাপ্টেন, শিপিং এজেন্ট ও স্টিভেডরর্স্দের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে বৈরি আবহাওয়ার কারনে মংলা বন্দরে অবস্থানরত কয়লা, ম্যাশিনারীস ও সারবাহী ১১টি মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য খালাস কাজ দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ রয়েছে। এসকল জাহাজকে নিরাপদে রাখতে বলেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় মনিটরিংয়ের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি কন্ট্রোল রুম খুলেছে।
বিডি প্রতিদিন/ ২০ মে ২০১৬/ হিমেল-১১