নাটোরের বড়াইগ্রামে অতি-দরিদ্রদের জন্য ৪০ দিনের 'কর্মসৃজন কর্মসূচি' প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে এলেও এখন পর্যন্ত উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের কোন একটি প্রকল্পেও সাইনবোর্ড লাগানো হয়নি।
এ সুযোগে কিছু কিছু প্রকল্পে কোন কাজ না করেই টাকা তুলে নেয়া হচ্ছে। আবার কোন কোন প্রকল্পে সপ্তাহে ২-৩ দিন অর্ধেকেরও কম শ্রমিক কাজ করলেও সব শ্রমিকের নামেই টাকা তুলে নেয়া হচ্ছে। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে কাজ বন্ধ থাকলেও কোন প্রকল্পেই সেসব দিনের টাকা তোলা বন্ধ রাখা হয়নি। উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা ও প্রকল্প সভাপতিরা এভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
উপজেলা প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরের 'কর্মসৃজন কর্মসূচি'র (২য় পর্যায়) আওতায় গোপালপুর ইউনিয়নে ৬টি প্রকল্পে সপ্তাহে পাঁচ দিন প্রতিদিন ২০০ টাকা মজুরীতে ১৭৯ জন শ্রমিক তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
বুধবার সরেজমিনে প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, গোপালপুর মারকুস রোজারিও’র বাড়ি হতে রহিমের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্পে ৩০ জন শ্রমিক কাজ করার কথা। কিন্তু মাত্র একদিন ১০-১২ জন শ্রমিক এ রাস্তার নুতন কালভার্টের গোড়ায় কিছু মাটি ফেলা ছাড়া আর কোন কাজ করেনি। স্থানীয় মারকুস রোজারিওসহ এলাকার প্রায় ১০ জন ব্যক্তি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রাওতা শহীদুলের বাড়ি হতে কলোনী গাফফারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্পে গত শনি ও রবিবার গিয়ে কোন শ্রমিক পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে বুধবার পুনরায় প্রকল্পে গেলে ৩০ জন শ্রমিকের মধ্যে মাত্র ১২ জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেছে। পুর্ণকলস আহম্মেদের বাড়ি হতে টুকুর বাড়ি পর্যন্ত প্রকল্পে ৩১ জনের মধ্যে ১৬ জন, কচুয়া হবির বাড়ি হতে ইয়াসিনের বাড়ি পর্যন্ত প্রকল্পে ২৮ জনের মধ্যে ১৩ জন, গড়মাটি আশ্রয়ণ প্রকল্প হতে শহিদুলের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্পে ২৯ জনের মধ্যে ২৪ জন এবং গড়মাটি কাদেরের বাড়ি হতে ফজলুর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্পে ৩১ জনের মধ্যে মাত্র ১৯ জন শ্রমিক কাজ করতে দেখা গেছে।
এদিকে, মঙ্গলবার নগর ইউনিয়নের তালশো মল্লিকের বাড়ি হতে আব্দুল কুদ্দুসের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্পে গিয়ে দুপুর দুইটায় কোন শ্রমিক খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি এ প্রকল্পের ৫০ গজের মধ্যে বিগত আরো দুটি কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পের সাইনবোর্ড ঝুলতে দেখা গেছে, তবে এবারের প্রকল্পের কোন সাইনবোর্ড পাওয়া যায়নি।
বারবার একই রাস্তায় একই জায়গা প্রকল্প নেয়া এবং প্রকল্পে শ্রমিক না থাকার বিষয়ে প্রকল্প সভাপতি ওয়ার্ড মেম্বার নাসরিন বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি।
উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নগুলোতে একই অবস্থা দেখা গেছে। গোপালপুর ইউনিয়নের দুটি প্রকল্পে কর্মরত শ্রমিক আরফান ভূঁইয়া ও আজিজুল হক বলেন, প্রতিদিন আমরা এই কয়জনই কাজ করি। আমরা বিল তুলতে ব্যাংকে যাই না। প্রকল্প সভাপতিই ব্যাংক থেকে টাকা তুলে এনে আমাদেরকে দেন। তবে কতজন শ্রমিকের টাকা তোলেন তা আমরা জানি না।
এ ব্যাপারে রাওতা শহীদুলের বাড়ি হতে কলোনী গাফফারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্পের সভাপতি বেলাল হোসেন মেম্বার বলেন, কিভাবে কাজ হচ্ছে তা পিআইও স্যার জানেন। তাকেও দেই, আপনারা এক সময় আসেন, যা দেয়া লাগে দেবো। ভোটের আগে এসব নিয়ে লেখালেখি করার দরকার নাই।
জনতা ব্যাংক রাজাপুর শাখা ব্যবস্থাপক শ্রী সুজিৎ বিশ্বাস জানান, প্রতি সপ্তাহেই গোপালপুর ইউনিয়নে তালিকাভূক্ত ১৭৯ জন শ্রমিকেরই বিল পরিশোধ করা হয়েছে, কারো বিল বাদ দেয়া হয়নি।
কচুয়া এলাকার সমাজসেবক আলাউদ্দিন জানান, বর্তমান সরকার হতদরিদ্র মানুষদের কথা ভেবে এ প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। কিন্তু কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের অর্থলোলুপতার কারণে প্রকল্পের অর্ধেক টাকাই লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। এতে প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী বলেন, এসব বিষয়ে লেখালেখি করে কোন লাভ হবে না। আমি সব দিক ম্যানেজ করেই কাজ করি।
বিডি প্রতিদিন/ ২০ মে ২০১৬/ হিমেল-১৪