শেষ হয়েছে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে ধসে পড়া ভবনের উদ্ধার অভিযান। এ নিয়ে মৃতর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫। বুধবার সকাল ৮টার দিকে এ উদ্ধার অভিযান শেষে করা হয়। নিহতরা হলেন: মো. জাহিদ ড্রাইভার (৪০) ও তার মেয়ে পিংকি আক্তার (১৩) এবং উম্মে হাবিবা (২২), সামাদ (১২) সাজিদুল (৭) ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে রাঙামাটি শহরের সরকারি মহিলা কলেজ এলাকায় কাপ্তাই হ্রদে একটি দোতলা ভবন ধসে পড়ে। খবর ফেয়ে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, বিজিবি ও রেড কিসেন্টের সদস্যরা ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। রাতে ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হয় তারা। তবে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি ওই ভবনের আর এক শিশুকে।
আজ বুধবার সকাল ৭টার দিকে আবারও উদ্ধার অভিযানে নামে কাপ্তাই শহীদ মোয়াজ্জেম ঘাঁটির নৌবাহিনীর ডুবুরি দল। ঘণ্টাব্যাপী চেষ্টা চালিয়ে অবশেষে উদ্ধার করা হয় নিখোঁজ শিশু সাজিদুলকে। এরপর উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেন নৌ বাহিনীর কাপ্তাই শহীদ মোয়াজ্জেম ঘাঁটির কমান্ডার লে. কর্নেল রাইয়ান আল বেরুনী। তিনি বলেন, রাতে অনেক চেষ্টা করেও শিশুটিকে উদ্ধার সম্ভব হয়নি। ধসে পড়া ভবনে আর কোন লোকজন আটকে পড়ার আশঙ্কা নেই বলে নিশ্চিত হওয়ার পর এ উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করা হয়েছে। এছাড়া এ ভবন থেকে যারা বেঁচে আছেন তাদেরও দাবি এ ভবনে আর কোন মানুষ নেই।
নিহতদের ময়নাতদন্তের পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে রাঙামাটি সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়।
এ ঘটনায় রাঙামাটি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া বাড়ীর মালিক টিটু বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে রাঙামাটি কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান রাঙামাটি জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাদ) মো. সফিউল সারোয়ার। অন্যদিকে নিহতদের পরিবারদের ২০ হাজার টাকা করে অনুদান প্রদান করেছেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিকেল ৫টার দিকে টিনের ছাদ দেয়া ভবনটি পানিতে হেলে যেতে দেখা যায়। এর পরপর দু-তিনজন বের হয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ভবনের অর্ধেক অংশ ডুবে যাওয়া ঘর থেকে বেড় হতে পারেনি চারটি পরিবারের কমপক্ষে ৮ জন মানুষ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি ও রেড ক্রিসেন্টসহ স্থানীয়রা। দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা চালিয়ে ভবনের কিছু অংশ ভেঙে উদ্ধার করা হয় মো. জাহিদ ড্রাইভার (৪০) ও তার মেয়ে পিংকি আক্তার (১৩) এবং উম্মে হাবিবা (২২) ও সামাদকে। উদ্ধারের পর তাদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করে।
এদিকে এ খবর শহরে ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাস্থলে সাধারণ মানুষের ঢল নামে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
এ ব্যাপারে রাঙামাটি অতিরিক্ত সিভিল সার্জেন রুহী বনানী জানান, চারজনকে হাসপাতালে নেওয়া আসা হয়েছিল। কিন্তু এর আগেই পানিতে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, কাপ্তাই হ্রদ তীরবর্তী এলাকায় ঠিকাদার টিটুর ভবনটিতে ভাড়া থাকতো ৪টি পরিবার। সম্প্রতি কাপ্তাই হ্রদে পানি বেড়ে যাওয়া ঝুঁকির মুখে পড়ে ভবনটি। কিন্তু তারপরও ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছিলেন তারা। বিকাল ৫টার দিকে হঠাৎ ভবনটির পাশে একটি নারিকেল গাছ পানিতে উল্টে পড়ে। এপরপরই ভবনটিও ধসে পড়ে।
বিডি-প্রতিদিন/০৫ অক্টোবর, ২০১৬/মাহবুব/ আফরোজ