পঞ্চগড় সদর উপজেলার জগদল বাজারে মহাসড়ক দখল করে বসছে হাট। ঢাকা-বাংলাবান্ধা মহসড়কের উপর এই হাট বসায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের চলাচল।
সরেজমিন দেখা গেছে, প্রতি শনিবার এবং বুধবার জগদল বাজারে হাট বসে। মহাসড়কের দুই পাশ দখল করে বর্তমানে ধান ব্যবসায়ীরা বেচা-কেনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্থানীয়রা জানায়, ধানের সময় ধান,পাটের সময় পাট, তিলের সময় তিলসহ অন্যান্য ফশলের মৌসুমে ব্যবসায়ীরা বেচা-কেনার জন্য মহাসড়ক দখল করে।
অনেক সময় রাস্তার মাঝখানেও পন্য বোঝাই ভ্যানের লাইন দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে মহাসড়কের দুই পাশেই আটকে পড়ে বিভিন্ন পরিবহন। বাংলাবান্ধাগামী বা ঢাকাসহ সারাদেশগামী বিভিন্ন পরিবহন ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে পরে। সাধারণ মানুষের চলাচলও হয়ে পড়েছে ঝুকিপূর্ণ। এই মহাসড়কের পাশেই রয়েছে জগদল উচ্চ বিদ্যালয় এবং জগদল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। প্রতিনিয়তই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে এই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের। তাদের অভিভাবকরাও থাকেন দুঃচিন্তায়।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, জেলায় সবচেয়ে দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকা জগদল। ২০১৫ সালে এই এলাকায় একই পরিবারের ৬ জন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়। এ বছরের সেপ্টেম্বরে একই পরিবারের তিনজন, এবং নভেম্বরে তিনমোটরসাইকেল আরোহী তরুণ নিহত হয়। এছাড়াও বছরের বিভিন্ন সময় নানা ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে।
এই এলাকার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন মৌসুমী ফসল কেনা বেচার জন্য জগদল বাজারে নির্দিষ্ট কোন জায়গা নেই। কৃষকেরা দূর দূরান্ত থেকে তাদের মারাইকৃত ফসল বিক্রি করতে আসে এই বাজারে। সদর উপজেলার সবচেয়ে বড় হাট এটি। অন্যদিকে জেলার মধ্যস্থানে এই হাট গড়ে ওঠায় জেলার অন্যান্য উপজেলাসহ দেশের নানা প্রান্তের আমদানীকারকরা এই হাটে পন্য বেচা-কেনা করে থাকেন। নির্দিষ্ট কোন যায়গা না থাকায় মহাসকেই চলছে এই হাট ।
তারা জানান এই হাট থেকে সরকার বছরে এক কোটি টাকারও বেশী আয় করে। কিন্তু হাটের উন্নয়নে সরকারি কোন উদ্যোগ নেয়া হয়না। হাটে কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থাও করা হয়নি। নুনিয়া পাড়া এলাকার কৃষক আব্দুস ছালাম (৪৫) জানান, মহাসড়কে পন্য বেচা কেনা করতে খুব অসুবিধা হয়। তাড়াহুড়ো করেই পন্য বিক্রী করতে হয় আমাদের। হাটটি অন্য কোথাও বসলে ভাল হয়। স্থানীয় ধান ব্যবসায়ী মাসুদ রানা (৩৫) জানান, জন্মের পর থেকেই এই সড়কে হাট বসতে দেখে আসছি। হাটটি অবশ্যই সরিয়ে ফেলা দরকার। মহসাড়কে হাট বসার কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে।
হাট ইজারাদার বাবুল হোসেন জানান, বৃটিশ আমল থেকেই মহাসড়কেই হাট বসছে। হাটের জায়গার জন্য ব্যবসায়ীরা মিলে বহুবার সরকারি দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করেছি কিন্তু কোন লাভ হয়নি। তিনি বলেন সরকার প্রতিবছর এই হাট থেকে প্রায় বিশ লক্ষ টাকা রাজস্ব পায়। ভ্যাট ট্যাক্স মিলিয়ে সরকার এই হাট থেকে প্রতি অর্থবছরে ১ কোটি টাকারও বেশী আয় করে। কিন্তু হাটের উন্নয়নে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়না। জগদল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে নানা ভাবে যোগাযোগ করা হয়েছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লায়লা মুনতাজেরী দীনা বলেন, জগদল বাজারের আসে পাশে কোন সরকারি জমি নেই। তাই হাটটি আপাতত অন্য কোন যায়গায় স্থানান্তর করা যাচ্ছেনা। তবে ঐ এলাকার কেউ জমি দিতে চাইলে সরকারিভাবে তা অধিগ্রহণ করে হাটটি স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।
বিডি প্রতিদিন/২৩ ডিসেম্বর ২০১৬/হিমেল