সময়টা ডিসেম্বর ২০১৫ সালের। লামা উপজেলার সদর ইউনিয়নের শিক্ষিত বেকার যুবক মোজাম্মেল হোসেন স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্নে তখন বিভোর। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল না তার। ব্যবসা করার মত ছিলনা মূলধন। অনেক ভাবনা চিন্তা করে গরু ছাগলের খামার করার সিদ্ধান্ত নেয় সে। হাতে ছিল স্বল্প কিছু টাকা। খুজঁতে থাকে আরও সমমনা দুই থেকে চারজনকে। ভাগ্য সহায় হওয়ায় পেয়েও গেল সে।
বলছিলাম লামা সদর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড পাহাড় পাড়া এলাকার চার বন্ধু মোজাম্মেল হোসেন (২২), রুপসীপাড়া ইউনিয়নের অংহ্লারী পাড়ার বিদেশ ফেরত মোর্শেদ আলম (২৯), লামা বাজার নয়াপাড়া এলাকার প্রাইমারী শিক্ষক তহিদুল ইসলাম হাসান (৩০) ও লামা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড চাম্পাতলী এলাকার অবসর প্রাপ্ত আর্মি নুরুল আলম (৩৮) এর কথা। তারা চারজন মিলে শুরু করেন গরু ছাগলের খামার। সে সময় এই ৪ জনের প্রাথমিক মূলধন ছিল ৫০ হাজার টাকা। লামা সদর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড পাহাড় পাড়ায় ৪০ শতক পাহাড়ি জায়গা লীজ নিয়ে ১৫টি ছাগল ও ১টি গাভী গরু দিয়ে শুরু খামারের যাত্রা করেন তারা। গরু মোটাতাজা করণ ও ছাগল পালন করতে শুরু করেন তারা।
আজ এক বছর এক মাস বয়স তাদের খামারের। বর্তমানে ১৩টি নেপালী জাতের বড় গরু, ১৮টি ছাগল রয়েছে খামারে। আরও আছে গরু ছাগলের জন্য আলাদা টিন শেড ঘর, ১৬৫০টি কলা গাছ। গরু, ছাগল ও অন্যান্য সম্পদের বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১২ লাখ টাকা। আবার খামার সম্প্রসারণের জন্য লীজ নেয়া হয়েছে আরও ৬ একর ৬০ শতক জায়গা। এই পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে ধাপে তাদের বিনিয়োগকৃত মূলধনের পরিমাণ ৭ লাখ টাকা। ১ বছরে খামারের লাভ হয়েছে ৫ লাখ টাকা।
উদ্যোক্তা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, "আমি ছোট বেলা থেকে স্বপ্ন দেখতাম, চাকুরী করবনা। নিজে কিছু করব। কিন্তু সমস্যা ছিল অর্থের। যাক তারপরে পেয়ে গেলাম সমমনা তিন বন্ধুর দেখা। অন্যের জমিনে কাজ করে বেতনের কিছু টাকা দিয়ে সংসার চলত আর বাকী টাকা লাগাতাম খামারের কাজে। সবাই মিলে নিজেদের সঞ্চিত টাকা দিয়ে তিলে তিলে গড়ে তুললাম এই খামারটি। আজ অনেক বেকার যুবকরা আমাদের খামার দেখতে আসে। তারা অনেকে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে, নিজেরা কিছু করতে। লক্ষ্য স্থির থাকলে স্বপ্ন বাস্তবায়ন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এই বছর আমরা আরো ২ কানি জায়গায় পেপেঁর চাষ করব।"
বিদেশ ফেরত মোর্শেদ আলম জানায়, "দুই বছর আগে আমি সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে আসি। আত্মীয় স্বজন ও দেশের লোকজনকে ফেলে বিদেশ থাকতে ভাল লাগতনা। সেখানে মাসে আয় করতাম ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। অথচ এখন আমি খামারে দৈনিক ২ঘন্টা সময় দেই। বাকী সময় আমি সংসারের অন্যান্য কাজ করি। ১ম বছরের খামারে সামান্য মূলধন আর স্বল্প সময়ে আমার একক আয় ১লাখ ২৫ হাজার টাকা। খামারে এখন ২জন নিয়মিত কর্মচারী আছে। আজ আমি অন্যের কাজ করিনা, অন্য লোক আমার খামারে কাজ করে। তবে বিদ্যুৎ ও পানির সমস্যা থাকায় আমাদের কষ্ট হচ্ছে।"
মোর্শেদ এসব কথা যখন বলছিলেন, তখন মোর্শেদ আলমের মুখে ছিল সাফল্যর তৃপ্তির হাসি। তিনি বললেন, "পরিচিত কোনো বন্ধু যখন চাকরি করার কথা বলেন, আমি তাদের উৎসাহ দেই ব্যবসা করো। কারণ, আমাদের একটাই লক্ষ্য ‘চাকরি করব না, চাকরি দেব’।"
স্থানীয় ইউপি মেম্বার আব্দু রহমান বলেন, "এই চার জন যুবককে দেখে অনেকের শিক্ষা নেয়া উচিত। চাকুরীর পিছনে না ঘুরে নিজেরা উদ্যোক্তা হওয়া যায়। যার জন্য সবচেয়ে বেশী দরকার মনোবলের। আমি নিজেও চিন্তা করছি এই ধরনের কিছু একটা করব। আমি প্রায় সময় খামারটি দেখতে যাই।"
সফল চার উদ্যোক্তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে লামা সদর ইউপি চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন বলেন, "তাদের উদ্যোগটা অনেক সুন্দর। একদিকে তারা নিজেরা স্বনির্ভর হচ্ছে অন্য দিকে এলাকায় কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারী নানা পৃষ্টপোষকতা পেলে তারা আরো ভাল করবে।"
বিডি-প্রতিদিন/ ২৮ জানুয়ারি, ২০১৭/ আব্দুল্লাহ সিফাত-২০