ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চারলেন চালুর পরও থামছে না দুর্ঘটনা। একের পর এক মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, সড়ক ও ট্রাফিক আইন অমান্য করে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা কমছে না।
এ সড়কে প্রায় প্রতিদিন ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। যাত্রীরা মনে করেন, গাড়িচালকদের অসতর্কতা ও অসচেতনতা হাইওয়েতে দুর্ঘটনা বাড়ার প্রধান কারণ। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১২ মাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে ৬০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচ শতাধিক।
গত বছরের ১০ জানুয়ারি বাতিসায় চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার ছিকলপুর গ্রামের আহম্মদ নবীর পুত্র জুনাব আলী, ১৩ জানুয়ারি ছুপুয়ায় শমেসপুরের আবদুস সাত্তারের মেয়ে গার্মেন্টস্ কর্মী জাহানারা আক্তার, ১৪ জানুয়ারি মিয়াবাজারে জগমোহনপুরের ওহিদ মিয়ার পুত্র মোহন মিয়া ও ৩১ জানুয়ারি লাটিমীতে আলকরা ইউনিয়নের কাইচ্ছুটি গ্রামের শফিক মিয়ার পুত্র সৌদি প্রবাসী গোলাম রাব্বানী সুমন নিহত হয়েছেন। ১ ফেব্রুয়ারি পদুয়া রাস্তার মাথায় সিএনজি বেবি টেক্সি চালক লক্ষীপুর জেলার রামগঞ্জের অলিপুর গ্রামের জাহের আহমদের পুত্র আবদুর রহিম, ১২ ফেব্রুয়ারি বাবুর্চি বাজারে ট্রাক হেলপার নারায়নগঞ্জের ফতুল্লার আলিগঞ্জ গ্রামের আবদুল বারেক ওরফে কালা মিয়ার পুত্র সজিব, ১৫ ফেব্রুয়ারি মিয়াবাজারে এক শ্রমিক, ২৬ ফেব্রুয়ারি শুভপুর ইউনিয়ের পাশাকোট গ্রামে মাদরাসা ছাত্রী পিংকি আক্তার, ২৮ ফেব্রুয়ারি চৌদ্দগ্রাম দোয়েল চত্বর এলাকায় বাসযাত্রী নাঙ্গলকোটের আদ্রা গ্রামের আবুল কালামের পুত্র ওমর ফারুক, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের মিতালী গ্রামের নেছার আলীর পুত্র সানোয়ার হোসেন ও চৌদ্দগ্রামের উজিরপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের স্ত্রী মঞ্জুয়ারা বেগম নিহত হয়েছেন।
এছাড়া একই বছরের ৫ মার্চ সুজাতপুর রাস্তার মাথায় জগন্নাথদীঘি ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামের আবদুল ওয়াবের পুত্র তারেক ও অজ্ঞাতনামা পুরুষ, ১২ মার্চ জোড়কানন এলাকায় ট্রাক চাপায় চৌদ্দগ্রামের সাংবাদিক আকতারের ভাই জসিম উদ্দিন, ২৩ মার্চ মিয়াবাজারে বগুড়া জেলার সোনাতলায় এজেড নুর আহমেদ নিহত হয়েছেন। ৪ এপ্রিল গাংরা রাস্তার মাথায় দক্ষিণ বেতিয়ারা গ্রামের বাবুল মিয়ার স্ত্রী শাহেনা বেগম, ১৪ এপ্রিল ফালগুনকরায় অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি, ১৭ এপ্রিল হাড়িসর্দারে দেবিদ্বার উপজেলার এক যুবক, ২৬ এপ্রিল মিয়াবাজারে সিএনজি চালক শ্রীপুর ইউনিয়নের গোপালনগর গ্রামের মৃত আবদুল খালেকের পুত্র আমির হোসেন, ৩০ এপ্রিল বাবুর্চি বাজারে কুমিল্লা বাগরাবাদ গ্যাস কোম্পানীর কর্মকর্তা ইকবাল আজিম নিহত হয়েছেন। ৫ মে লাটিমী রাস্তার মাথায় আলকরা ইউনিয়নের কুলাসার গ্রামের অলি আহাম্মদের পুত্র সেলিম আদনান নিপন, ৭ মে চট্টগ্রামের মেহেনা বাগ এলাকার লিলন চন্দ্র কর্মকারের স্ত্রী লক্ষী রানী কর্মকার, ফালগুনকরায় চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার পশ্চিম ধনমুড়ি গ্রামের ছিদ্দিকুর রহমান, ১৭ মে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে ও চৌদ্দগ্রাম সরকারী কলেজ গেইট এলাকায় গোল্ডলিফ সিগারেটের বিক্রয়কর্মী চান্দিনার মহিশাল গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে আরিফুল ইসলাম, রিকশাচালক লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মদনপুর গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে শরিফুল, পিকআপ চালক টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার বন্দরকুলিয়া গ্রামের মুজিবুরের ছেলে সবুজ, পথচারী চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার নবগ্রামের হাজেরা খাতুন ও অজ্ঞাতনামা এক যুবক। সড়ক দূর্ঘটনায় আহত বিজয়করা স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক হাবিবুর রহমান ১৮ মে রাতে মারা যান। তার বাড়ি কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের হরিনধরা গ্রামে।
২৬ মে সৈয়দপুরে ঘোলপাশা ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের আবদুল মান্নান নিহত হয়েছেন। ২ জুন চিওড়া রাস্তা মাথায় সদর দক্ষিণ উপজেলার পশ্চিম যুক্তিখোলা এলাকার কেটারদুয়ারের মনু মিয়ার পুত্র মনজুর হোসেন, ৪ জুন পদুয়া রাস্তার মাথায় একজন, ৫ জুন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফারজানা আক্তার বিজলি, ৭ জুন চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে পৌর এলাকার রামরায় গ্রামের আবদুল কাদেরের ছেলে কামরুল হাসান, ২২ জুন চৌদ্দগ্রাম থানা এলাকায় ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার করইয়ারহাট গ্রামের মৃত ইসমাইল হোসেনের আলমগীর হোসেন, ২৪ জুন ফকিরবাজারে কনকাপৈত ইউনিয়নের তারাশাইল পশ্চিম পাড়ার গোলাম সরোয়ার সাজুর ছেলে অলিউর রহমান পলাশ নিহত হয়েছেন।
৪ জুলাই আদর্শগ্রাম এলাকায় পৌর এলাকার নবগ্রামের ওষুধ ব্যবসায়ী আমান উল্যাহ, ৯ জুলাই মিরশান্নীতে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার ফতেহপুর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম, ২৭ জুলাই ছুপুয়ায় ঢাকার সাভার পৌরসভার শাপলাপুর গ্রামের আবদুস সাত্তার পাটোয়ারীর পুত্র সাইদুল ইসলাম শান্ত নামের এক কাভার্ডভ্যান হেলপার নিহত হয়েছেন। ১৮ আগস্ট আটগ্রামে চৌদ্দগ্রাম সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র তারেকুল ইসলাম জুয়েল নিহত হয়েছে। ৮ সেপ্টেম্বর আটগ্রামে বাতিসা ইউনিয়নের দৈয়ারা গ্রামের কবির হোসেনের পুত্র সোহাগ মিয়া, ৯ সেপ্টেম্বও ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার মনতলী গ্রামের আবদুল মন্নানের পুত্র আবদুল করিম ও উত্তর নিলুহী গ্রামের নাছির উদ্দিনের পুত্র মোহন মিয়া, ১৯ সেপ্টেম্বর আটগ্রামস্থ ডলি রিসোর্ট এলাকায় পৌরসভার পাঁচরা গ্রামের মধু মেম্বারের বাড়ির মাঈন উদ্দিনের ছেলে মোঃ মাহফুজ, ২৭ সেপ্টেম্বর সড়ক দূর্ঘটনায় আহত ছারছিনা আলিয়া মাদরাসার অবসরপ্রাপ্ত ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা মোস্তফা হামিদী মারা যান। তার বাড়ি নাঙ্গলকোট উপজেলার রায়কোট ইউনিয়নের চারিজানিয়া গ্রামে। এরআগে তিনি ফালগুনকরা এলাকায় সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হন।
২ অক্টোবর ছুপুয়ায় ভ্যানচালক কালিকাপুর ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামের মৃত আলী মিয়ার পুত্র আবদুল কাদের নিহত হন। ৩ অক্টোবর চৌদ্দগ্রাম বাজারের সোনালী ব্যাংকের সামনে চিওড়া ইউনিয়নের সুজাতপুর গ্রামের মৃত জন্তুর আলীর পুত্র আবদুর রাজ্জাক, ২৫ অক্টোবর ঘোলপাশা ইউনিয়নের মতিয়াতলী গ্রামের আবদুর রশিদ প্রকাশ রশিয়ার পুত্র মোঃ মহিন, ১৩ নভেম্বর ফালগুনকরা স্কুলের সামনে চিওড়া ইউনিয়নের কবরুয়া গ্রামের সাদ্দাম হোসেনের স্ত্রী ফাতেমা আক্তার সোনিয়া, ২৩ নভেম্বর মিয়াবাজারে দেবিদ্বার উপজেলার বাগুর এলাকার আবদুল খালেকের ছেলে মো. জহির নিহত হয়েছেন।
১২ ডিসেম্বর হোটেল হাইওয়ে ইন-এর সামনে চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার মহামায়া গ্রামের আবুল হাশেমের পুত্র মোঃ সোহেল, সড়ক দূর্ঘনায় আহত শাহজাহান সুমন ১৫ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ২৬ ডিসেম্বর লাটিমীতে আলকরা ইউনিয়নের কাইচ্ছুটি গ্রামের মাওলানা সামছুল হকের পুত্র সানা উল্যাহ, ২৯ ডিসেম্বর পদুয়া ঢাকার বংশাল থানার চানখাঁরপুল এলাকার মনিকা রহমান, মেহেরপুরের রফিকুল ইসলাম ও চাঁদপুরের কচুয়ার বাসিন্দা সোহাগ, ৩০ ডিসেম্বর চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সদরের বালিকা বিদ্যালয় রাস্তায় মাথায় চিওড়া ইউনিয়নের জিনিদকরা গ্রামের ইকবাল হোসেনের স্ত্রী জয়নব বেগম ও তার ছেলে রবিউল আলম নিহত হয়েছেন।
সচেতন মহল মনে করেন, ড্রাইভিংয়ের সময় চালকদের ফোনে কথা বলা এবং সিগারেট খাওয়া রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। এমনকি অদক্ষ চালক, বেপরোয়া গতি, সড়ক ও ট্রাফিক আইন অমান্য করা চালকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন করা উচিত। না হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোতে দিনের পর দিন প্রাণ ঝরতেই থাকবে। সড়কে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে অবশ্যই চালককে সচেতন হতে হবে। কারণ, একটি গাড়ি চালাতে হলে চালককে যেসব নিয়ম মেনে চলতে হয়, সেগুলো তারা মানছেন না। ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনা।
বিডি প্রতিদিন/২৯ জানুয়ারি ২০১৭/হিমেল